<p>শেখ হাসিনার শাসনামলে মুন্সীগঞ্জে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও ছাত্রলীগ নেতাদের হাত থেকে নিরাপদ ছিলেন না। তারা নানা অত্যাচার, জুলুম, মিথ্যা মামলা, হামলা এবং অস্ত্র প্রদর্শন করে অনেককে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, মুন্সীগঞ্জ জেলা এবং সদর উপজেলার কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আসলে সাবেক এমপি হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে পরিচিত ছিল। ফয়সাল বিপ্লব এই সময়ে টানা তিনবার পৌর মেয়র ছিলেন এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের তত্ত্বাবধান করতেন।</p> <p>জেলা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের আস্তানা ছিল মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নিচতলায়। এই পৌরসভাটি ১৬ বছর ধরে স্থানীয় এমপি, পৌর মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে ডেকে এনে নানা অত্যাচার করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। তারা দিনে রাতে অস্ত্র প্রদর্শন করে মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করত।</p> <p>সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবের অধীনে এই ছাত্রলীগের সংঘবদ্ধ চক্রটি ১৬ বছরের শাসনামলে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে অর্থসম্পদ অর্জন করেছে। তাদের কর্মকাণ্ডে পুলিশ প্রশাসন নিশ্চুপ ছিল বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা। মুন্সীগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সরকারি প্রকল্প থেকে লুটপাট, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, কৃষকদের উপর সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠা, এমনকি সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসা স্থাপন করার মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাদের হাত ধরে তারা কোটিপতি হয়েছেন এবং দেশ ও বিদেশে প্রচুর অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন।</p> <p>অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ফয়সাল মৃধা, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ পাভেল, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নছিবুল ইসলাম নোবেল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সাগর, সরকারি হরগঙ্গা কলেজ শাখার সভাপতি নছিবুল নিবির আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বেপারী, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: সুরুজ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক লাকুম রাঢ়িসহ অনেকে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে এখনো পলাতক এবং কিছু নেতা বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ফয়সাল মৃধা দীর্ঘ ১৫ বছরে পদ বাণিজ্য, সরকারি খাল দখল এবং নিরীহ কৃষকদের জমিতে মাছ চাষ, চাঁদাবাজি ইত্যাদির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার দখলে আছে অনেক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মুন্সীগঞ্জ শহরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা মামলার আসামি ফয়সাল মৃধা বর্তমানে পলাতক। অভিযোগ আছে, ফয়সাল মৃধা বিদেশে প্রচুর অর্থ পাচার করেছেন এবং তার অনেক সহযোগীও বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে।</p> <p>জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেলের বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদক, চাঁদাবাজি এবং জমি দখলের একাধিক মামলা। তার মাদক ব্যবসার সঙ্গীয় সহযোগী ল্যাংড়া খসরু র‍্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তিনি এলাকার ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিতি পান। পঞ্চসার ইউনিয়ন এবং রামপাল এলাকায় তার বিশাল মাদকের সাম্রাজ্য রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া পাভেল বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।</p> <p>শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নছিবুল ইসলাম নোবেল অস্ত্র প্রদর্শন এবং গুলি চালানোতে পারদর্শী। গত ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় ছাত্র জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে এই নেতা কয়েকজনকে আহত করেন। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকে তিনি প্রচুর অর্থসম্পদ অর্জন করেছেন এবং বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন।</p> <p>শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন সাগর একসময় সাধারণ ছাত্র ছিলেন কিন্তু কিছু অপরাধমূলক কার্যকলাপের পর ক্ষমতাসীন দলের নজরে আসেন এবং প্রধান সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি পান। জমি দখল, চাঁদাবাজি, এবং মাদক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।</p> <p>সরকারি হরগঙ্গা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিবির আহম্মেদ এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর বেপারীর বিরুদ্ধেও অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। নিবির দীর্ঘদিন জেল খেটেও পদে বহাল ছিলেন। আলমগীর বেপারী ১০ বছর ধরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।</p> <p>সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সুরুজ মিয়া বিএনপি সরকারের সময় একজন ব্যাংকের দালাল ছিলেন, পরবর্তীতে ছাত্রলীগে যুক্ত হয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্য থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি পলাতক।</p> <p>ছাত্রলীগের আরও কিছু নেতাকর্মী যেমন মোঃ মাহমুদুল হাসান লাকুম রাঢ়ি, শাকিল আহম্মেদ এবং বাবু কাজী ছাত্রলীগের সহিংসতার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। বাবু কাজীকে স্থানীয়ভাবে শুটার বাবু হিসেবে পরিচিত।</p> <p>সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবের সহযোগিতায় এসব নেতাকর্মীরা বহুবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। ভুক্তভোগীরা এসব সন্ত্রাসী নেতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।</p> <p>স্থানীয়দের দাবি, দুর্নীতি দমন কমিশন যদি তদন্ত চালায় তবে ছাত্রলীগের এই নেতাদের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা উন্মোচিত হবে।</p>