<p>সব প্রকার বৈষম্য নিরসনের ঘোষণা দিয়ে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিলেও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরে (ইউডিডি) এখনো চরম বৈষম্য চলছে। অধিদপ্তরের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামী সিন্ডিকেট। সরকার পতনের পর দীর্ঘ বঞ্চিত যোগ্য কম্পানিগুলোকে কাজ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা হচ্ছে না। বরং সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও যোগ্য কম্পানিগুলোকে কাজ না দিয়ে পুনঃ দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে আওয়ামী কম্পানিকে কাজ দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> <p>চলমান বৈষম্য নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) লিখিত অভিযোগ দিয়েছে অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ৬টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (কম্পানি)। </p> <p>অভিযোগে বলা হয়েছে, অত্র প্রতিষ্ঠান ‘বারোটি উপজেলার সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কারিগরি মূল্যায়নের মাধ্যমে ৬টি প্যাকেজের ফলাফল সরকার পতনের পর গত ২১ ও ২২ আগস্ট প্রকাশিত হয়। এরপর এক মাস অতিবাহিত হলেও প্যাকেজ চুক্তির জন্য যোগাযোগ না করায় প্যাকেজের মূল্যায়নে উত্তীর্ণ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন জানানো হয়, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মাহমুদ আলীর নির্দেশে উক্ত প্রকল্পে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। অথচ এ বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কোনো পূর্বালোচনা করা হয়নি। এমনকি কোনো প্রকার চিঠি দেওয়া হয়নি। যা পিপিআর-২০০৮ আইনবহির্ভূত। </p> <p>অভিযোগে আরো বলা হয়, বিজয়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো অধিদপ্তর পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে প্রকল্পের কার্যাদেশের অগ্রগতি জানতে লিখিত আবেদন দেয়। তখন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন পরিচালক মাহমুদ আলী। </p> <p>তিনি জানান, নিজের একক ক্ষমতাবলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করবেন। এরপর অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিচালক ‘টিলার’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অধিদপ্তরের টেণ্ডারবাজ সিন্ডিকেটের প্রধান ‘টিলার’-এর পক্ষ থেকে পরিচালক বরাবর চিঠিও দেওয়া হয়েছে। ‘টিলার’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী তামজীদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের শ্যালক পরিচয়ে ইতিপূর্বে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরে ১০টি প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যার ৫টি প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। তামজীদুল ইসলামের বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় গত ১০ বছরে তার অনুমতি ছাড়া কেউ দরপত্র জমা দিতে পারেনি।</p> <p>অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলী ও টিলারের তামজীদুল ইসলামের মধ্যে টেন্ডার নিয়ে অনৈতিক সমঝোতা হয়েছে দাবি করে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সরকার পতনের পর স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ওই প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় টিলার কাজ পাইনি। যে কারণে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে অধিদপ্তর পরিচালককে প্রভাবিত করে উক্ত প্রকল্পটি পুনঃদরপত্রের আবেদন করেছে টিলার। যাতে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে বিগত দিনের মতো এখনো কাজ পেতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হলে তা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। যা সরকারের উন্নয়ণ কায়ক্রমে সময় নষ্ট হবে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।</p> <p>অভিযোগে জানা যায়, বিগত সরকারের শেষ সময়ে ৫টি প্রকল্পের মধ্যে চারটি কাজ টিলারকে প্রদান করা হয়। এমনকি পায়রা-কুয়াকাটা প্রকল্পে সিন্ডিকেটের বাইরের অন্য একটি ফার্ম কাজ পেলেও তা বাতিল করে টিলারকে দেওয়া হয়। অধিদপ্তরের এই বৈষম্য নিরসনে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।</p> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মাহমুদ আলী বলেন, প্রকল্পটির দরপত্র প্রক্রিয়ায় ভুল ছিল। প্রকল্পের ব্যয় এক কোটি টাকার বেশি হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বিধান থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। যে কারণে দরপত্রের কার্যাদেশ স্থগিত রেখে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জাননো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।</p>