<p>টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ এখন বারবার বিদ্যুতের সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। দিনে সূর্যের তেজ আর রাতে ভ্যাপসা গরমে অসহনীয় অবস্থায় সময় পার করছে মানুষ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রচণ্ড দাবদাহ আর দিনের বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বেচা-বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।</p> <p>এ উপজেলায় মির্জাপুর ও গোড়াই পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের আওতাধীন প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে ছোট ছোট কুটির শিল্পসহ কারখানার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এসব কারখানায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় মিলছে ৩২ থেকে ৪০ মেগাওয়াট। </p> <p>চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ কম হওয়ায় উপজেলাজুড়ে বারবার লোডশেডিং চলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মির্জাপুর ও গোড়াই পল্লী বিদ্যুৎ অফিস।</p> <p>জানা গেছে, দেশের উত্তর ও পশ্চিমের প্রবেশদ্বার মির্জাপুর উপজেলা। এ উপজেলায় মির্জাপুর ও গোড়াই জোনাল অফিসের আওতাধীন প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে। এ ছাড়া ছোট ছোট কুটির শিল্পসহ প্রায় ৫ হাজার শিল্পকারখানাও রয়েছে। এসব শিল্পকারখায় তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।</p> <p>গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে মির্জাপুরে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত। মানুষের সঙ্গে প্রাণিকূলের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। জমিন শীতল হতে প্রকৃতির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রাণীকূল। গত কয়েকদিন যাবৎ এ উপজেলায় ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করেছে বলে কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছেন।</p> <p>বিদ্যুৎ সঞ্চালন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের মির্জাপুর ও গোড়াই দুটি জোনাল অফিস রয়েছে। মির্জাপুর জোনাল অফিসের আওতাধীন কয়েকটি শিল্পকারখানাসহ প্রায় ৯৫ হাজার এবং গোড়াই জোনাল অফিসের আওতায় প্রায় ৪৫০টি ছোট বড় শিল্পকারখানাসহ ৮৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। মির্জাপুর ও গোড়াইতে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে মির্জাপুরে ৩২ থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। সকাল ৭টার পর থেকে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। দুপুরে তীব্রতা আরো বেশি। প্রচণ্ড গরমে সবচেয়ে বিপদে আছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রোদে তাকালেই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। টানা গরমে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। এসির বাতাসেও গরম হাওয়া বের হচ্ছে।</p> <p>এর মধ্যে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে ঘন ঘন লোডশেডিং। লোডশেডিং হলে বাসার মধ্যে যেন দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরো বেশি।</p> <p>বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে এবং শনিবার দিনে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ বার লোডশেডিং হয়েছে বলে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে। </p> <p>জানা যায়, ভয়াবহ এই লোডশেডিংয়ে টাঙ্গাইলের একমাত্র শিল্পাঞ্চল খ্যাত উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের মিল কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া এই গরমে শিশুরা সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শনিবার বিকেলে এই সংবাদটি লেখার সময় পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং চলে।   </p> <p>মির্জাপুর বাজারের ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ সাহা জানান, প্রচণ্ড দাবদাহে দোকানে বসে থাকা যায় না। আবার ঘন ঘন লোডশেডিং চলছে। পড়নের কাপড় ঘামে ভিজে যাচ্ছে।</p> <p>মির্জাপুর বাজারের কম্পিউটার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের সঙ্গে ব্যবসার আয় সম্পৃক্ত। বিদ্যুৎ না থাকলে রোজগার বন্ধ। গত এক সপ্তাহ যাবৎ বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং চলছে। </p> <p>কাপড় ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহা জানান, সামনে দূর্গাপুজা। এখন বেচাবিক্রি বেশি হবে। এমনিতেই মার্কেটের ভেতরে কাপড়ের দোকান। বিদ্যুৎ না থাকায় মার্কেটের ভেতর অন্ধকার থাকে। ক্রেতা আসে না। এই মুহূর্তে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করছে। বেচাবিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তাই আছি। </p> <p>মসজিদ মার্কেটের রাফা ফার্মেসীর মালিক মো. শাহিন মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরমে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার পাল্লা দিয়ে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং।</p> <p>ভাওড়া গ্রামের মো. ওহাব মিয়া ও লিটন মাহমুদ জানান, তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে। বিদ্যুতের এত খাারাপ অবস্থা আগে কখনো হয়নি বলে তিনি জানান।</p> <p>পল্লী বিদ্যুৎ মির্জাপুর অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জসিম উদ্দিন জানান, উৎপাদন কম থাকায় সর্বোচ্চ লোড চলছে। তার অফিসের আওতায় প্রায় ৯৫ হাজার এবং গোড়াই জোনাল অফিসের আওতায় প্রায় ৮৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা ১০০ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৩২ থেকে ৪০ মেগাওয়াট। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিং কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।</p>