<p style="text-align:justify">ছাত্র না হয়েও শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হন গার্মেন্টসকর্মী জুয়েল মিয়া (২৮)। নিজের কাজকর্ম বন্ধ করে মিছিল, মিটিং ও পিকেটিংয়ে সর্বদাই ছিলেন সবার সামনে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার খবরে গাজীপুরের মাওনা এলাকায় তিনি বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। আর তখনই মাথায় গুলি লেগে লুটিয়ে পড়েন। </p> <p style="text-align:justify">এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পথে জুয়েলে মৃত্যু হয়। পরদিন ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। এর পর থেকেই নিজ ঘরের সামনে ঝুলতে দেখা যায় নিহত জুয়েলের ছবিসংবলিত একটি বড় সাইনবোর্ড। লেখা রয়েছে ‘বীরের বাড়ি’। আর এই বীরের বাড়িতেই উড়ছে জাতীয় পতাকা। দীর্ঘদিনের পরিচিত ‘মোড়ল বাড়িটি’ এখন ‘বীরের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">নিহত জুয়েল মিয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই খাকধারা গ্রামের মো. আব্দুল হাইয়ের ছেলে। দুই ছেলের মধ্যে জুয়েল বড়। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি কর্মের জন্য গাজীপুরের মাওনা এলাকার ওয়াপদা মহল্লায় থাকতেন। সেখানে তিনি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। </p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ৬ বছর আগে বিয়ে করে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করেন জুয়েল। তার আয়ের একটা অংশ গ্রামে বাবা-মাকে পাঠাতেন। জুয়েলের চার বছর বয়সের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">জুয়েলের স্ত্রী জুবায়দা বেগম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে প্রায় প্রতিদিন পুলিশের গুলিতে অনেকেই নিহত হলে স্বামী জুয়েলের মন খুবই খারাপ হয়। এই জন্য তিনি নিজের কাজে না গিয়ে প্রতিদিনই ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে মিছিলে যেতেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে চলে গেলে আনন্দ মিছিলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে বিকেল ৩টার দিকে খবর পান তার স্বামী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে জানতে পারেন হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান। </p> <p style="text-align:justify">নিহত জুয়েলের মা জিনুয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার কইলজার ধনরে কেরে মারল? হে তো খালি আনন্দ করতে গেছিন। অহন আমি কী লইয়া বাচবাম?’</p> <p style="text-align:justify">এলাকাবাসী জানায়, জুয়েল ছিল তাদের জন্য একটা গর্বের বিষয়। বাড়িতে এলেই তার নম্রতা-ভদ্রতা ও মানবিকতা সবার মন কেড়ে নিত। কারো বিপদে সব সময় সহযোগিতা করতেন। তার এই মৃত্যুতে গ্রামবাসী একজন ভালো মানুষকে হারাল। এ জন্য নিজেরাই একটি সাইনবোর্ড বানিয়ে তাতে জুয়েলের ছবি ও নাম লিখে ‘বীরের বাড়ি’ আখ্যায়িত করেছেন। প্রতিদিন সম্মানের সঙ্গে জাতীয় পতাকা টানিয়ে রাখা হয়। যা দেখে গ্রামের সবাই অনেক উৎফুল্ল।</p>