<p>গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিনই কুমিল্লা নগরে এক শ্রমিকদলের নেতা তাঁর লোকজন নিয়ে তিনটি দোকান দখল নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মো. মাহবুব হোসেন ওরফে মামুন নামের ওই শ্রমিকদল নেতার জোরপূর্বক দখল করা ওই তিনটি দোকানের মূল্য অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।</p> <p>এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় ওই শ্রমিক দল নেতার বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় দোকান দখলের অভিযোগ করা হয়।   </p> <p>সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন- কুমিল্লা নগরের গাংচর এলাকার কবির হোসেন এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর মেয়ে মুন্নী আক্তার। এ সময় তারা নিজেদেরকে নগরের চকবাজার এলাকায় দখল ওই তিনটি দোকানের মালিক বলে দাবি করেন। </p> <p>অভিযুক্ত শ্রমিক দল নেতা মাহবুব হোসেন কুমিল্লা নগরের চকবাজার বালুধূম এলাকার মেতু মিয়ার ছেলে। তিনি দক্ষিণ জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সহ-সভাপতি। </p> <p>সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কবির হোসেন ও মুন্নী আক্তার জানান, ২০১৮ সালের কুমিল্লা নগরের শুভপুর এলাকার মরহুম হাজী সফিকুর রহমানের ওয়ারিশ রোকেয়া বেগম গংদের কাছ থেকে সাফ কবালা দলিলমূলে নগরের গাংচর এলাকার কবির হোসেন এবং টিক্কারচর এলাকার মোহাম্মদ আলী যৌথভাবে তিনটি দোকান ক্রয় করে তিনজনের কাছে ভাড়া দেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় শ্রমিক দলের নেতা মাহবুব হোসেন মামুন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ৭০-৮০জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে দোকান তিনটি দখল করে প্রথমে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে তার নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। জায়গার প্রকৃত মালিকরা ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকদল নেতা মামুন ও তার লোকজন ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের চলে যেতে বলে। </p> <p>তারা আরো জানান, ওইসময় দেশের পরিস্থিতির কারণে কোথাও আইনি সহায়তা চাওয়ার সুযোগ না থাকায় গত ১৮ আগস্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু তিন সপ্তাহেও প্রশাসন থেকে কোনো সাড়া পাননি তারা। শ্রমিকদলের ওই নেতার ভয়ে জায়গার প্রকৃত মালিক হওয়া সত্ত্বেও সেখানে যেতে পারছেন না উল্লেখ করেন তারা।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে জায়গাটি ক্রয় করার পর তানা জানতে পারেন বিএস জরিপে জায়গাটি শ্রমিক দল নেতা মাহবুব হোসেন মামুনের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। পরে ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তারা আদালতে নাম সংশোধনের জন্য মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। মামলাটির পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ৯ অক্টোবর। এমন পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দিনই দোকানগুলো দখলে নেন ওই শ্রমিক দলের নেতা। কুমিল্লার চকবাজার সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড সংলগ্ন ওই তিনটি দোকানের একটি ভাড়া নিয়ে একসময় ব্যবসা করেছেন শ্রমিক দল নেতা মামুনের বাবা মেতু মিয়া। এক পর্যায়ে মেতু মিয়া ওই দোকানের মালিক দাবি করলে জায়গার মালিক আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত বাদীর পক্ষে রায় দিলে ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি আদালত কর্তৃক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসিল্যান্ড প্রকৃত মালিককে জায়গাটি বুঝিয়ে দেন। </p> <p>আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এসব বিষয়ে জানতে শ্রমিক দল নেতা মাহবুব হোসেন ওরফে মামুন বলেন, তারা জাল দলিল করে এতদিন দোকানগুলো নিজেদের দখলে রেখেছিল। দোকানগুলোর প্রকৃত মালিক আমি; এজন্য আমি দোকানগুলো দখলে নিয়েছি। আমার সকল কাগজপত্র রয়েছে। তাদের জাল দলিলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। সেটিও চলমান রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। </p> <p>কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন বলেন, ঘটনাটি এখনই আমরা শুনেছি। দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই কোনো অপকর্মে জড়িত হবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে এভাবে দোকান দখল করার কোনো সুযোগ নেই।</p>