<p>কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, পানি ক্রমেই কমছে। তবে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। সেইসঙ্গে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগবালাই। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামছে। তবে উপজেলার ভিতরের গ্রামে রাস্তাঘাট, বাড়িঘরে এখনো পানি আছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে ভেসে উঠছে ময়লা-আবর্জনা। ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগবালাইয়ে। এর মধ্যে ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটে ব্যথা, জ্বরসহ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বানভাসীরা।</p> <p>ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগীদের ভিড় লক্ষণীয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ওষুধ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত ৫০ শয্যার হাসপাতালে ৩৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী ও শিশু ভর্তি রয়েছে। বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন অর্ধশতাধিক রোগী।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চৌদ্দগ্রামে একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে বন্যাকবলিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছে আড়াই লাখের বেশি মানুষ। ২৯টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। উপজেলার বন্যার পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। দূষিত পানি পান ও বন্যার পানিতে চলাফেরার কারণে এ ধরনের রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও চোখের প্রদাহের রোগীর সংখ্যাই বেশি।</p> <p>বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন ৬০ জন। এরমধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ২০ জন নারী ও ২৪ জন শিশু। তবেভাগ শিশুই ডায়রিয়া আক্রান্ত।</p> <p>চৌদ্দগ্রাম করপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হোসনা আক্তার বলেন, ‘চৌদ্দগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করার সময় দেখেছি, বন্যাকবলিত এলাকার পানি ময়লা। এখন আমার এলার্জি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ডাক্তার বলেছে, বন্যার পানিতে নামার কারণে এ সমস্যা হয়েছে।; </p> <p>নূরজাহান আক্তার ৩ বছর বয়সী আদিবা নামের কন্যা সন্তান নিয়ে বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত সাত দিনের অধিক সময় ধরে বন্যার পানিতে ঘরবন্দি ছিলাম। আমার মেয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। পানি অতিক্রম করে আজ তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের কোনো ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।’</p> <p>শামসুল আলম রাজন নামে বলেন, ‘চার মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে সোমবার থেকে এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। এলার্জি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। গত ছয় দিনের অধিক সময় ধরে পুরো পরিবার পানিবন্দি ছিলাম।’</p> <p>হাসপাতালের সিনিয়র নার্স হাসিনা বেগম বলেন, হাসপাতালে এক দিনে ৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। যাদের অধিকাংশই বন্যাকবলিত এলাকা থেকে আসা। রাত হলেই রোগীদের চাপ বাড়তে থাকে। ভর্তিদের অধিকাংশ ডায়রিয়া আক্রান্ত। যার মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।</p> <p>বহির্বিভাগের চিকিৎসক ডা. সামছুল ইসলাম রানা জানান, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়াসহ পানি প্রবাহিত রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগে আগত রোগীদের শতকরা ১০ ভাগ ডায়রিয়া আক্রান্ত। তবে এর সংখ্যা বাড়তে পারে। </p> <p>উপজেলার রাজাপুর ক্যাম্পের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা বন্যার শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া, চর্ম ও শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি হচ্ছে। পুরুষ, মহিলার তুলনায় শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি।</p> <p>উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া বলেন, বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ডায়রিয়া, চর্ম ও শ্বাসকষ্টের রোগী। দিন যত যাবে, রোগীদের সংখ্যা তত বাড়তে পারে। </p> <p>ওষুধ সঙ্কট সম্পর্কে তিনি বলেন, বন্যায় পুরো হাসপাতালটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্টোর রুমে যত ওষুধ ছিল সব পানিতে নষ্ট হয়েছে। যার কারণে ওষুধ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।</p>