<p style="text-align:justify">ফরিদপুরের নগরকান্দায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত জাতীয়তাবাদী কৃষকদল নেতা কবির ভূঁইয়া (৫০) হত্যা মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুকে। তাছাড়া মামলায় সালথা-নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির ৩৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ শনিবার (২৩ আগস্ট) সকালে কবির ভূঁইয়ার স্ত্রী মোনজিলা বেগম বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।</p> <p style="text-align:justify">মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল তালুকদার, সাধারন সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল, সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক খন্দকার খায়রুল আলম আজাদ, জেলা যুবদলের যগ্ম সাধারন সম্পাদক মাসুদুর রহমান তৈয়ব ও সালথা উপজেলার সাবেক ভাই চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জহামান আসাদ। তাছাড়াও বিএনপির আরো পদধারী নেতারা আসামি হয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">মামলার এজাহারে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল নিজ এলাকায় আগমণ উপলক্ষে গত বুধবার (২১ আগস্ট) বেলা ১১ টার দিকে নগরকান্দা পেট্রোল পাম্পের সামনে পথসভার আয়োজন করে থানা কৃষকদল, যুবদল ও ছাত্রদল। এই সংবাদ পেয়ে বিএনপির নেত্রী শামা ওবায়েদ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ওই পথসভা পণ্ড করার জন্য তার লোকজনকে নির্দেশ দেন।</p> <p style="text-align:justify">একই সঙ্গে নির্দেশ দেয় যে, যা কিছু হোক, যেভাবেই হোক, লোক মারতে হলে মরবে তবুও বাবুলের পথসভা করতে দেওয়া যাবে না। খুন জখমের মামলা যাই হোক আমি দেখব। তার এই নির্দেশ পাওয়ার পর আসামিরা ঘটনার সময় নগরকান্দা বেইলী ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় কবির ভূঁইয়া বাজার করার জন্য নগরকান্দায় আসলে শামা ওবায়েদের নিদের্শে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।</p> <p style="text-align:justify">শনিবার দুপুরে মামলার বিয়ষটি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-নগরকান্দা) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল কালের কণ্ঠকে বলেন, সংঘর্ষে নিহত কবিরের স্ত্রী বাদী হয়ে সকালে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। আমরা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।  </p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু ও জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক (পদ স্থগিত) শহিদুল ইসলাম বাবুলের বাড়ি নগরকান্দায়। তারা দুই জনই ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) আসনে এমপি পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তাদের দুইজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। </p> <p style="text-align:justify">এরই মধ্যে আওয়ালী লীগের পতনের পর গত বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে মহড়া দিয়ে এলাকার নগরকান্দায় আসেন বাবুল। তার বাবুলের আগন উপলক্ষে নগরকান্দা পেট্রোল পাম্পের সামনে পথসভার আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে শামা ওবায়েদের সমর্থকরাও সেখানে জড়ো হন। একপর্যায় উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।</p> <p style="text-align:justify">সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বেলা ১১টার দিকে বাবুল গ্রুপের সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে নগরকান্দা পৌর সদর বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয় রিংকুর সমর্থকরা। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের অন্তত ৫০ জন আহত হন। আহতদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কবীর ভূঁইয়া নামে এক কৃষকদল নেতা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি শহিদুল ইসলাম বাবুলের সমর্থক। নিহত কবির সদেরর ছাগলদী গ্রামের মৃত আবুল বাসার ভূইয়ার ছেলে ও উপজেলা কৃষকদলের সদস্য।</p> <p style="text-align:justify">সংঘর্ষে নিজের সমর্থক নিহতের পর ঘটনার দিন বিকেল ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমি আজ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলি, এই খুনের মদদদাতা ও নির্দেশদাতা শামা ওবায়েদ।</p> <p style="text-align:justify">তবে শহিদুল ইসলামের বক্তব্য নির্জলা মিথ্যাচার হিসেবে অখ্যায়িত করে শামা ওবায়েদ বলেন, উনি কি বললেন না বললেন তাতে কিছু যায়-আসে না। তিনি বলেন, আমরা স্বৈরাচারকে হটিয়েছি। এখন হাসপাতালের শয্যায় অসংখ্য আহত ভাই কাতরাচ্ছে। প্রতিদিন মারাও যাচ্ছে। এ অবস্থায় তোরণ বানিয়ে উৎসব করা আমাদের সাজে না। এ বিষয়টিই হয়তো এলাকার মানুষ মেনে নিতে পারেনি। এ কারনেই হয়তো এ ঘটনা ঘটেছে।</p>