<p>তিন মাস ২৬ দিন পর আবার খোলা হয়েছে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। এবার মসজিদের ৯টি দানবাক্স বা সিন্দুকে পাওয়া গেছে ২৮ বস্তা টাকা।</p> <p>আজ শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে খোলা হয় সিন্দুকগুলো। এরপর সকাল ৯টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ২৮টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সেগুলো গণনার কাজ চলছে।</p> <p>কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে সিন্দুকগুলো খোলা হয়। বিপুল সংখ্যক সেনাসদস্য, পুলিশ ও আনসার মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।</p> <p>এর আগে গত ২০ এপ্রিল খোলা হয়েছিলে মসজিদের দানবাক্সগুলো। তখন পাওয়া গিয়েছিল রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল দানবাক্সগুলো। তখন পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩টাকা।</p> <p>কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ৩ মাস ২৬ দিন পর আজ শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। স্থায়ী দানবাক্সগুলো ভরে যাওয়ায় এবার বাড়তি আরেকটি অস্থায়ী দানবাক্সও দেওয়া হয়েছিল।</p> <p>২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ।</p> <p>অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহুয়া মমতাজের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করছেন। তাছাড়া মসজিদের পেশ ইমাম</p> <p>মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা আনোয়ার পারভেজসহ মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ মোট ২২০ জনের একটি দল অংশ নিয়েছেন। সারাদিন গণনা শেষে রাতে জানা যাবে টাকার পরিমাণ।</p> <p>স্থানীয়রা জানান, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসে পাগলা মসজিদে। দান করে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন।</p> <p>তা ছাড়া আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে প্রাপ্তির আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে।</p> <p>সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুকের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। টাকাগুলো ভরতে ২৮টি বস্তার প্রয়োজন পড়ে। এগুলো পরে মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমান গণনাকারীদের সামনে ঢেলে দেওয়া হয় টাকাগুলো। এভাবেই শুরু হয় গণনার কাজ।</p> <p>পাগলা মসজিদের টাকা জমা হয় রূপালী ব্যাংকে। এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদের কর্মচারী, কমিটির লোকজন, মাদরাসার ছাত্রসহ সব মিলিয়ে দুই শতাধিক লোক সারা দিন টাকাগুলো গুনবে।</p> <p>মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র।</p> <p>জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা,</p> <p>ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে।</p> <p>মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, দানের টাকায় মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামী কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সব কিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই হয়তো কাজে হাত দিতে পারব আমরা।</p> <p>কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদ গড়ে উঠেছিল। সময়ের সঙ্গে আজ পাগলা মসজিদের পরিধির সঙ্গে বেড়েছে খ্যাতিও।<br />  </p>