<p style="text-align:justify">ঝিনাইদহের ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা জেলা সদর হাসপাতাল। নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে কয়েক বছর ধরে রোগীরা সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেবার নামে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে হাসপাতালটি। </p> <p style="text-align:justify">ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। হাসপাতালের এমন অনিয়ন-দুর্নীতি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হলেও কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় সেবা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন।</p> <p style="text-align:justify">অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ থেকে শুরু করে সকল কর্মকাণ্ড- পরিচালিত হয়। রোগীদের স্বল্প মূল্যের প্যারাসিটামল, এন্টাসিডের মতো ওষুধ ফ্রি দেয়া হলেও বেশি দামের ওষুধ দেওয়া হয় না। দামি ওষুধগুলো ওই সিন্ডিকেট কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। </p> <p style="text-align:justify">সরকারি বরাদ্দকৃত টাকার লোক দেখানো কিছু কাজ করে অধিকাংশ টাকা ব্যয় না করে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয় তাঁরা। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষে সিট-বাণিজ্যও করা হয়। </p> <p style="text-align:justify">এছাড়া শহরের অধিকাংশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কমিশনের ভিত্তিতে দালালের মাধ্যমে রোগী প্রেরণ করে থাকে ওই সিন্ডিকেট। তবে হাসপাতালে ওষুধ সামগ্রী ও উন্নয়নে গত দুই বছরে সরকার কি পরিমাণ বরাদ্দ দিয়েছে তার তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েও পাওয়া যায়নি।</p> <p style="text-align:justify">মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিন সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগের রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে হাসপাতালের ফার্মেসির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনেকেই ফার্মেসি থেকে তাঁদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ২য় তলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কক্ষে অধিকাংশ চিকিৎসক ছিলেন অনুপস্থিত।</p> <p style="text-align:justify">হাসপাতালে সেবা নিতে আসা শৈলকুপার দুধসর গ্রামের গোলাম নবী বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে আইছিলাম বিনা টাকায় আমার ছেলের চিকিৎসা করাতে। কিন্তু ডাক্তার আমাকে ৮৫০ টাকার ওষুধ লেখে দিয়েছে আর একটা নাপা সিরাপ তাঁরা দিয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">হরিণাকুর চরপাড়া গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম বিনামূল্যে ওষুধপত্র পাওয়ার আশায়, তাকে ভর্তি করার পর হাসপাতাল থেকে এক পাতা প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। সব ওষুধ শুধু বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে বলে নার্সরা।’</p> <p style="text-align:justify">শহরের কাঞ্চনপুর এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আফরোজা খাতুন বলেন, ‘হাসপাতালে প্যারাসিটামল আর অ্যান্টাসিড ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না, ফার্মেসি থেকে অনেক টাকার ওষুধ কিনতে হয়।’</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক স্যার একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাসপাতাল পরিচালনা করে। প্রতিদিন হাসপাতালে আসা শত শত রোগীর আহাজারি শুনতে শুনতে কান ভারী হয়ে ওঠে। আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ দিয়ে থাকে। তবে ওই সিন্ডিকেটের জন্য দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা সরকারি সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’</p> <p style="text-align:justify">এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সদর হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, ‘আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নাই। দেশের সদর হাসপাতালগুলো যে নিয়মে পরিচালনা করা হয় আমাদের এখানেও একই নিয়মে চলছে।’</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে জানতে সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে গেলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।</p>