<p>শেখ হাসিনার পদত্যাগ-পরবর্তী সহিংস ঘটনায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরো ১০-১২ জন।</p> <p>সোমবার (৬ আগস্ট) রাত ১০টার পর থেকে পরবর্তী ২০ ঘণ্টায় সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ, দুজন ইউপি চেয়ারম্যান, দুটি পত্রিকা অফিস, কমপক্ষে পাঁচটি থানা, একজন চিকিৎসকের বাড়ি, আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।</p> <p>এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় জেলখানা থেকে চলে যাওয়ার সময় আসামি ও কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাতাহাতিতে কমপক্ষে ৫৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন জেলার হাসনা জাহান বিথীসহ ২১ জন কারারক্ষী ও কর্মকর্তা। এ সময় আন্দোলনকারীরা শতাধিক কারারক্ষীর রেশন, পিসি কার্ডের টাকা ও ক্যান্টিনের ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা লুটপাট করে। তবে চলে যাওয়া ৫৯৬ জন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আসামি কলারোয়ার সোহাগ হোসেন, আব্দুল রকিব, আব্দুল গফ্ফার, শাহিন, মাফুজারসহ নাশকতা মামলার আসামিসহ দুই শতাধিক আসামি মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে আবার কারাগারে ফিরে এসেছে।</p> <p>গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা গ্রামে এবং সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে পৃথক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।</p> <p>নিহতরা হলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের দুইবারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাকনা গ্রামের মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে শেখ জাকির হোসেন (৫৩), একই গ্রামের শেখ শাহাজুর রহমান সাজুর ছেলে শেখ শাকের (২২),  মৃত শেখ সুজাত আলীর ছেলে শেখ জাহাঙ্গীর (৪৮), মৃত শেখ আরিফুল ইসলাম এর ছেলে শেখ আশিক (৩৩), লস্করী খাজরা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহিন আলম (২২), একই গ্রামের শেখ আজুয়ার রহমানের ছেলে সজীব (২২), কুড়িকাউনিয়া গ্রামের ওয়ারেজ আলী মোড়লের ছেলে হাফেজ আনাজ বিল্লাহ (২১) ও একই ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের নুর হাকিম ঘোরামীর ছেলে আদম আলী (২৩) ও হিজলিয়া গ্রামের ছাত্তার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (১৬) এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের বৈকারী গ্রামের মৃত রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমান (৬০), মৃগিডাঙা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন (২৭), একই গ্রামের তেজামউদ্দিনের ছেলে মুকুল হোসেন (৩৪), আব্দুল গফুরের চেলে ফারুক হোসেন সান্টু (৪০) ও ঘোনা গ্রামের জবেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৯)। গুলিবিদ্ধ আহতদের কয়েকজনকে সাতক্ষীরা সদর ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।</p> <p>প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ ঢালী বলেন, সোমবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কয়েক শ লোক মিছিল নিয়ে নাকনা গ্রামের জাকির চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা জাকির চেয়ারম্যানের বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তিনি (জাকির) বাড়ির দোতলা থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০-১২ জন আহত হয়। এ সময় ক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়ি ঘেরাও করে রাখে।</p> <p>এদিকে আহতদের চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে হাফেজ আনাজ বিল্লাহ, আদম আলী ও আলমগীর মারা যায়। পরে তাদের মরদেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনলে বিক্ষুব্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।</p> <p>এক পর্যায় রাত পৌনে ৮টার দিকে তারা (বিক্ষুব্ধ জনতা) জাকিরের বাড়িতে ঢুকে তাকে (জাকির)সহ তার সঙ্গে থাকা  শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে মেরে ফেলে। এ সময় বাড়িতে থাকা জাকিরের  স্ত্রী ও মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।</p> <p>চেয়ারম্যান দাউদ ঢালী আরো বলেন, ‘আমি বর্তমানে নাকনা গ্রামে নিহত সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বাড়িতে আছি। নিহতদের মরদেহগুলি শনাক্ত করা হয়েছে। আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর নির্দেশে নিহতদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করার জন্য থানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’</p> <p>এ বিষয় জানার জন্য আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিশ্বজিৎ অধিকারির মোবাইলে কয়েকবার রিং করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।</p> <p>এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে দুর্বৃত্তরা আসাফুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আসাফুর রহমান বৈকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুর রহমান অসলের ভাই।</p> <p>সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আহমেদ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই আসাফুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে।</p> <p>অপরদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সোমবার রাতে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে দুটি থানা থেকেই অস্ত্র, গোলাবারুদসহ পুলিশ সদস্যদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পরপরই দুর্বৃত্তরা পৃথকভাবে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া থানায় থানায় ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।</p> <p>মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে সাতক্ষীরার সদর থানায় গিয়ে দেখা গেছে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে থানা ভবন। ভিতরে একটি রুম থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। থানার সব দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।</p> <p>মঙ্গলবার দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ইমরান হোসেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার পুনঃ সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ-পরবর্তী জেলায় সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে সাধারণ ছাত্র আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই। ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ কমপক্ষে ৩০টি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভাতে বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ জন।</p>