<p style="text-align:justify">শেখ হাসিনার পদত্যাগ-পরবর্তী সহিংসতায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরো ১০-১২ জন।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা গ্রামে এবং সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে পৃথক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।</p> <p style="text-align:justify">নিহতরা হলো সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের দুইবারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাকনা গ্রামের মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে শেখ জাকির হোসেন (৫৩), একই গ্রামের শেখ শাহাজুর রহমান সাজুর ছেলে শেখ শাকের (২২), মৃত শেখ সুজাত আলীর ছেলে শেখ জাহাঙ্গীর (৪৮), মৃত শেখ আরিফুল ইসলামের ছেলে শেখ আশিক (৩৩), লস্করী খাজরা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহিন আলম (২২)। </p> <p style="text-align:justify">একই গ্রামের শেখ আজুয়ার রহমানের ছেলে সজীব (২২), কুড়িকাউনিয়া গ্রামের ওয়ারেজ আলী মোড়লের ছেলে হাফেজ আনাজ বিল্লাহ (২১) ও একই ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের নুর হাকিম ঘোরামীর ছেলে আদম আলী (২৩) ও হিজলিয়া গ্রামের ছাত্তার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (১৬) এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের বৈকারী গ্রামের মৃত রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমান (৬০)। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ আহতদের কয়েকজনকে সাতক্ষীরা সদর ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ ঢালী বলেন, সোমবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে কয়েক শ লোক মিছিল নিয়ে নাকনা গ্রামের জাকির চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা জাকির চেয়ারম্যানের বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তিনি (জাকির) বাড়ির দোতলা থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০-১২ জন আহত হন। এ সময় ক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়ি ঘেরাও করে রাখে।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে আহতদের চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে হাফেজ আনাজ বিল্লাহ, আদম আলী ও আলমগীর মারা যায়। পরে তাদের মরদেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনলে বিক্ষুব্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।</p> <p style="text-align:justify">এক পর্যায় রাত পৌনে ৮টার দিকে তারা (বিক্ষুব্ধ জনতা) জাকিরের বাড়িতে ঢুকে তাকে (জাকির)সহ তার সঙ্গে থাকা শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে মেরে ফেলে। এ সময় বাড়িতে থাকা জাকিরের স্ত্রী ও মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">চেয়ারম্যান দাউদ ঢালী আরো বলেন, ‘আমি বর্তমানে নাকনা গ্রামে নিহত সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বাড়িতে আছি। নিহতদের মরদেহগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ এর নির্দেশে নিহতদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করার জন্য থানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে জানতে আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ বিশ্বজিৎ অধিকারীর মোবাইলে কয়েকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে দুর্বৃত্তরা আসাফুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। </p> <p style="text-align:justify">নিহত আসাফুর রহমান বৈকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুর রহমান অসলের ভাই। </p> <p style="text-align:justify">সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আহমেদ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই আসাফুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সোমবার রাতে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে দুটি থানা থেকেই অস্ত্র, গোলাবারুদসহ পুলিশ সদস্যদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পরপরই দুর্বৃত্তরা পৃথকভাবে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া থানায় থানায় ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।</p> <p style="text-align:justify">মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে সাতক্ষীরার সদর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে থানা ভবন। ভেতরে একটি রুম থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। থানার সব দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এই সুযোগে এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। </p> <p style="text-align:justify">আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের মৃত শামসুর গাজীর ছেলে মিলনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত বিছট বাজার ও আমতলা মোড়ে কয়েকটি দোকানের তালা ভেঙে মালপত্র লুটপাট করেছে বলে জানা গেছে। </p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে চাঁদা দাবিসহ বিভিন্ন লোকজনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।</p>