<p style="text-align:justify">নিজেকে ‘কুমিল্লার অভিভাবক’ হিসেবেই পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থাকা বাহার নিজেকে ভাবতেন কুমিল্লার গণমানুষের নেতা। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কুমিল্লায় রাজত্ব শুরু করেন তিনি। দিন যত গেছে বাহারের ‘বাহারি রাজত্ব’ ততই বেড়েছে। </p> <p style="text-align:justify">একটা সময় শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, নিজের দলের বিরোধীদেরও রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা করে ফেলেন বাহার। স্থানীরা জানায়, গত কয়েক বছরে কুমিল্লাজুড়ে একক রাজত্ব চলেছে বাহাউদ্দীন বাহারের। কুমিল্লা সদরের এমপি হলেও পুরো জেলাতে যেন বাহারের কথাই ছিল শেষকথা। জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের বেশির ভাগ সংসদ সদস্য ছিলেন বাহারের বলয়ে। শুধু তা-ই নয়, কয়েক মাস আগে শেষ হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও জেলার বেশির ভাগ উপজেলাতেই ছিল বাহারের আধিপত্য।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়ে বাহার ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ক্যাডার ও সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি। দমন-নিপীড়ন শুরু করেন সারা কুমিল্লায়। এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে এমপি বাহারের প্রভাব ছিল না। দীর্ঘদিনের ক্ষমতার প্রভাবে তিনি নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে গড়েছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ। গত ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে নিজ মেয়ে তাহসীন বাহার সূচনাকে বানিয়েছেন সিটি মেয়র। এককথায় বলতে গেলে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাহারই ছিলেন কুমিল্লার ‘একমাত্র রাজা’। তার ভয়ে তটস্থ ছিলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। </p> <div style="text-align:center"> <figure class="image" style="display:inline-block"><img alt="কালের কণ্ঠ" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/08/06/my168/451663828_8027844270633661_222262590470607078_n.jpg" width="600" /> <figcaption>বাহাউদ্দিন বাহার</figcaption> </figure> </div> <p style="text-align:justify"><br />  <br /> সোমবার (৫ আগস্ট) ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশত্যাগ এবং দেশবাসীর উদ্দেশে সেনাপ্রধানের দেওয়া বক্তব্য শুনেই কুমিল্লার ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। একই সঙ্গে অবসান ঘটে কুমিল্লার বাহারের বাহারি রাজত্বেরও। হাসিনার বিদায়ের পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা নগরীর মুন্সেফবাড়ী এলাকায় অবস্থিত আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। অগ্নিসংযোগ করা হয় পুরো বাড়িতে। এ ছাড়া লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। </p> <p style="text-align:justify">এ সময় বিক্ষুব্ধদের অনেকেই বলেন, ‘কুমিল্লার ফেরাউন থেকে আল্লাহ আমাদের মুক্ত করেছেন।’ আবার অনেকেই বলতে থাকেন ‘জালিম বাহারের হাত থেকে কুমিল্লা মুক্ত হয়েছে।’ </p> <p style="text-align:justify">এদিকে সোমবার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার মানুষ বাহার ও তার মেয়ে সিটি মেয়র সূচনাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য পোস্ট করছেন। তারা লিখছেন, ‘কোথায় গেল কুমিল্লার অভিভাবক!’, ‘এমপি বাহার এখন কোথায়’, ‘এক বাপের মেয়ে দেশটা খাইছে আর বাপ-বেটি মিলে কুমিল্লাটারে শেষ করছে’।</p> <p style="text-align:justify">মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে নগরীর মুন্সেফবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আগুনে পুড়ে যাওয় এমপি বাহারের বাড়ি দেখতে এসেছেন। এ সময় সবাই বাহারের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছে। বিক্ষুব্ধ জনতার দেওয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও তখনো যেন আগুনের উত্তাপ গায়ে লাগছিল। সারা বাড়িতেই পোড়া গন্ধ। গ্যারেজে পড়ে রয়েছে তিনটি পোড়া গাড়ির কঙ্কাল। তবে ঘরে প্রবেশের দুটো গেটই ছিল বন্ধ। দলে দলে মানুষ আসছে বাহার অধ্যায়ের অবসান দেখতে।<br />    <br /> সেখানে কথা হয় ৫৫ বছর বয়সী আবদুল মতিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জালিমের বাড়িটা কিভাবে পুড়ছে, সেটা দেখতে আসছি। কুমিল্লার মানুষকে বছরের পর বছর ধরে লুটে খেয়েছে বাহার। তাদের কাছে মানুষ জিম্মি ছিল। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গত সিটি নির্বাচনে তার মেয়েকে জোর করে পাস করাইসে।’<br /> সাইফুল ইসলাম নামের আরেক তরুণ বলেন, ‘বাহারও অন্য এমপিদের মতো বিদেশে এবং ঢাকায় বিপুল সম্পদ গড়েছেন। দুদকের উচিত এগুলো তদন্ত করে বের করা। এখানে যা পুড়েছে এতে তার (বাহারের) এক মাসের আয়ও নষ্ট হয়নি। বাপ-বেটি মিলে কুমিল্লার মানুষকে এত দিন জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের রাজত্বের অবসান হয়েছে, এতেই আমরা খুশি।’</p> <p style="text-align:justify">অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর দিক থেকেই কুমিল্লায় ছিলেন না এমপি বাহার। তিনি নিজের চিকিৎসার কথা বলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। এরপর সম্প্রতি দেশে ফিরে ঢাকায় চোখের চিকিৎসা করান। কিন্তু দেশে ফিরলেও কুমিল্লায় আর ফেরেননি তিনি। তবে বাহারের অনুসারীরা আন্দোলনের শেষ সময়ে এসে টানা কয়েক দিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলি চালিয়েছে। সর্বশেষ রবিবার বিকেলেও বাহারের পক্ষে কুমিল্লা নগরীতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে তাদের। কিন্তু সরকার পতনের পর বাহারের বিশ্বস্ত অনুসারীসহ নেতাকর্মীদের কুমিল্লায় দেখা যাচ্ছে না। তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। আবার কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।</p>