<p>কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সাংবাদিকসহ প্রায় অধশতাধিক আহত হয়েছেন। এরমধ্যে কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।</p> <p>সোমবার (৫ আগস্ট) একজন নিহত হয়েছেন। এর আগে রবিবার সকাল থেকে একত্র হয়ে টাউন হলের সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করেন বিক্ষোভকারীরা। মিছিলটি নগরীর জাহাজ কোম্পানী মোড় থেকে জেলা পরিষদ সুপার মাকেটে গেলে সেখানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরে রংপুর নগরীতে রণক্ষেত্র পরিনত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে নিহত হয় চারজন।</p> <p>নিহত হারাধন রায় হারা রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বলে জানাগেছে। তার নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রসিক ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম।</p> <p>নিহত অন্য চারজন হলেন- নগরীর গুড়াতিপাড়ার স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা খায়রুল ইসলাম খরশু (২৮), ছাত্রলীগ নেতা মাসুম মিয়া (২৩), হারাধন রায়ের ভাগ্নে শ্যামল চন্দ্র রায় (৩৭) এবং মুকুল মিয়া (৩১)।</p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, রবিবার সকাল থেকেই লাঠিসোটা নিয়ে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।</p> <p>অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অবস্থান নেন নগরীর টাউনহল চত্বরে। সেইসঙ্গে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। দুপুরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা সিটি করপোরেশনের দিকে চলে যান। পরে টাউন হল কেন্দ্রিক অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে পাল্টা ধাওয়া করে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়।</p> <p>ঘটনাস্থলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপর আবারো জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বরে পুনরায় অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে গিয়ে আটকে পড়েন পশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা। পরে পায়রা চত্বর থেকে পালিয়ে কালিবাড়ি মন্দিরে প্রবেশ করার সময় আন্দোলনকারীদের হাতে ধরা পড়েন হারাধন রায় হারা। সেখানেই এলোপাতাড়ি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে এলাপাথারি কোপাতে থাকেন। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হলেও পুনরায় এলোপাতাড়ি আঘাত করেন তারা। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনার খবর জানার পর হারাধনের মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।</p> <p>অন্যদিকে রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রংপুর-২ (বদরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ডিউক চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন, গংগাচড়া আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন, মিঠাপুকুর উপজেলার পরিষদ চত্বরে ইউএনও অফিস, বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়াম, আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন দফতরে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।</p> <p>দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের সামনে, সুপার মার্কেট, জাহাজ কোম্পানির ও পায়রা চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা দখলে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। চারদিকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মাথায় হেলমেট দেখলেই তেড়ে আসছেন এবং তাদের নানা রকমের জিজ্ঞাসা করছেন আন্দোলনকারীরা। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর সদস্যদের কোথাও প্রতিরোধ কিংবা অবস্থান করতে দেখা যায়নি।</p> <p>সোমবার সকাল থেকে নগরীর মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ টহল দিচ্ছেন। সাধারন মানুষদের তল্লাশি করছেন। একসঙ্গে দুই থেকে তিনজন মানুষ রিকসায় গেলে তাদের পরিচয়পত্র ও যথাযত প্রমাণ দেখাতে হচ্ছে।</p> <p>রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানান, সারাদেশে অনিদিষ্ট কালের কারফিউ চলছে। এর ফলে পুলিশ নগরীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়।</p>