<p>কোটা আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর একটি ভবনের আট তলার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আচমকা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আহাদ মাতুব্বর (৪)। শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। </p> <p>ওই ১১ তলা ভবনের আট তলায় আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী ও আহাদের বাবা আবুল হাসান, স্ত্রী সুমি আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও ছোট ছেলে আহাদ মাতুব্বরের (৪) বসবাস। </p> <p>নিহত আহাদ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামের আবুল হাসানের ছোট ছেলে। শিশু আহাদের আত্মার শান্তি কামনায় তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায় শুক্রবার (২৬ জুলাই) বাদ জুমা দোয়ার আয়োজন করা হয়। </p> <p>নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার নিজ বাসার বারান্দায় এক পাশে বাবা, আরেক পাশে মা ও মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট আবুল আহাদ। বাসার বারান্দায় দাঁড়ানো তিন জোড়া চোখ নিচের দিকে তাকিয়ে। বাসার নিচে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছিল। এর মাঝেই আচমকা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে শিশু আহাদ। বাবা ভেবেছিলেন ভয়ে ছেলে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। ছেলেকে ধরে তুলতে গিয়ে বুকের রক্তে ভিজে হিম হয়ে যায় আবুল হাসানের শরীর। ছেলেটার চোখ, মুখ, মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গুলিটা ডান চোখে বিদ্ধ হয়েছে। </p> <p>রক্তাক্ত ছেলেকে কোলে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসেন বাবা। নিচে অস্ত্রধারীরা এগিয়ে এসে তাকে বাধা দেয়। পরে ছেলের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে সরে দাঁড়ায় তারা। আহাদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা গুলি মাথার মধ্যে আছে বলে জানান। কিন্তু কোন অবস্থানে আছে, তা বোঝার জন্য সিটি স্ক্যান করতে হবে। কিন্তু সিটি স্ক্যান করাগে গেলে আইসিইউ'র যন্ত্রপাতি খুলে ফেলতে হবে। এতে শিশুটির মৃত্যুও হতে পারে। এদিকে সিটি স্ক্যান করাও জরুরি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই রাতে আহাদের মৃত্যু হয়। </p> <p>আহাদের মৃত্যুতে গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) বাদ জুমা স্থানীয় পুখুরিয়া মুন্সিবাড়ি মাদরাসা ও এতিমখানা, ব্রাহ্মণকান্দা মাদরাসা ও এতিমখানা, হরুপদিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং পুখুরিয়া রেলস্টেশন জামে মসজিদ ও পুখুরিয়া গ্রামের আটটি মসজিদে মিলাদ মাহফিল এবং দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।</p> <p>নিহত শিশু আহাদের চাচা মোখলেসুর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরদিন শনিবার (২০ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আহাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার বিকেল ৩টার দিকে আহাদের মরদেহটি তারা বুঝে পান। তারপর অ্যাম্বুল্যান্সযোগে গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার পুখুরিয়া গ্রামে আসেন। সেখানে বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে আহাদকে দাফন করা হয়।</p> <p>আহাদের বাবা আবুল হাসান বলেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়ে আমার ছেলে চলে গেল। এ নিয়ে আমি আর কী বলব! চেয়েছিলাম পোস্টমর্টেম না করতে। অতটুকু শরীর যাতে আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। কিন্তু আমাদের সে চেষ্টাও সফল হয়নি।’ </p> <p>আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে আগে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়েই পারিবারিক কবরস্থানের যাত্রা শুরু হলো।’</p>