<p style="text-align:justify">এ যেন রোগী ভাগানোর এক মহোৎসব। ফন্দি এঁটে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগী পাঠানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের জন্য ফার্মেসি সবই নির্ধারিত। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পা ফেললে রোগী ও স্বজনদের মুখোমুখি হতে হয় দালালের। শুধু পুরুষ নয়, রোগীর মন ভোলাতে রয়েছে নারী দালালও।</p> <p style="text-align:justify">গত বুধবার (১০ জুলাই) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা দরিদ্র ও অসহায় রোগী এবং তাদের স্বজনদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দালাল চক্রের সদস্যরা। প্রবেশদ্বার থেকে ভেতরের ওয়ার্ড পর্যন্ত পুরো হাসপাতালজুড়ে দালালদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য। </p> <p style="text-align:justify">স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে অর্ধশতাধিক দালালের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। যাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছর। হাসপাতালের চারপাশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসি মালিকেরা এসব দালালকে নিয়মিত দেখভাল করে বলে জানা গেছে।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী (রাহাদ ছদ্মনাম) বলেন, রোগী ভাগানোর ওপর দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে কমিশন পায় এসব দালালেরা। দালালদের মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব তৈরি করতে দেওয়া হয় লোভনীয় সব প্রস্তাব। যেসব বিভাগে রোগী বেশি, অস্ত্রোপচারের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয়, সেসকল রোগী ভাগাতে দালালদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, এ উপজেলায় বসবাসরত ৫ লক্ষাধিক মানুষের জন্য রয়েছে একটি মাত্র সরকারি হাসপাতাল। তবে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে রোগীদের প্রতিনিয়ত পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দরিদ্র ও অসহায় রোগীর একমাত্র আস্থার জায়গা। তবে এখানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি। রোগী বেশি হওয়ায় দালালদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটি। </p> <p style="text-align:justify">সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সক্রিয় থাকে দালালেরা। রোগী ও তাদের স্বজনদেরকে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম এমন দালালদের মাঠে দায়িত্ব দেয় পার্শ্ববর্তী প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকেরা। পুরুষ দালালদের পাশাপাশি নারী দালালদের হাতে নিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বার ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করে এসব দালালেরা।</p> <p style="text-align:justify">চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনেরা জানান, দালালেরা প্রথমে নিজেদের হাসপাতালের কর্মী পরিচয় দেন। পরে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা বলে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি অচল ও নিম্নমানের বলে রোগীদের পার্শ্ববর্তী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক নিয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">উদীচী জেলা কমিটির উপদেষ্টা স্বপন কুমার বাগচী বলেন, দরিদ্র অসহায় রোগীদের একমাত্র ভরসার হাসপাতালে যদি দালালদের এমন উৎপাত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এটি খুবই ভয়াবহ ঘটনা। দ্রুত এর সমাধান হওয়া জরুরি।</p> <p style="text-align:justify">বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, সরকারি হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অচিরেই দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</p>