<p style="text-align:justify">দফায় দফায় বন্যার আঘাতে সিলেট বিভাগের কৃষি ও মৎস্য  খাতে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি খাতে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৬০৫ কোটি টাকার বেশি। আর মৎস্য  খাতে প্রায় চার হাজার হেক্টর জলাশয়ে ১০৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="সিলেট বিভাগে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা" height="253" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/07.July/10-07-2024/988.jpg" style="float:left" width="343" />বিভাগের মধ্যে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট জেলা, ক্ষতির পরিমাণ ৪২২ কোটি টাকা। অন্যদিকে মৎস্য  খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জে, ৭২ কোটি টাকার ওপরে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতি</strong></p> <p style="text-align:justify">বন্যায় সিলেট বিভাগে ৩০ হাজার ৭৭২ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লাখ দুই হাজার ১১৯ জন কৃষক।</p> <p style="text-align:justify">বিভাগের চার জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সিলেট জেলার ২২ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এর মধ্যে ২৭ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত প্রথম ধাপের বন্যায় নষ্ট হয় সাত হাজার ৪৩ হেক্টর জমির ফসল। তাতে লোকসান হয় ১৪২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার। ১৪ জুন থেকে ২৪ জুন দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় নষ্ট হয় ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকার।</p> <p style="text-align:justify">সর্বশেষ ৩০ জুন থেকে তৃতীয় দফা বন্যায় ৪১২ হেক্টরের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে লোকসানের পরিমাণ চার কোটি ২৪ লাখ টাকার। এই জেলায় তিন দফায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার ২৭২ জন।</p> <p style="text-align:justify">মৌলভীবাজারে পাঁচ হাজার ৭৫৪.৩৫ হেক্টর জমির ফসলহানি হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১১৭ কোটি ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকার। এর মধ্যে সবজির জমি ৯৬৯.৬ হেক্টর, আউশ ধানের ৪ হাজার ৭৫৪.৭৫ হেক্টর আর ৩০ হেক্টর আউশ বীজতলার জমি।</p> <p style="text-align:justify">সুনামগঞ্জে এক হাজার ৪৪১.২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। এর মধ্যে ৪২৮.৩ হেক্টর জমির সবজি এবং এক হাজার ১২.৯ হেক্টর জমির আউশ ধান রয়েছে। এই জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আট হাজার ৩৫১ জন কৃষক।</p> <p style="text-align:justify">হবিগঞ্জে ৬১৬.৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার। এর মধ্যে ৪৬৩.২ হেক্টর জমির আউশ ধান এবং ১৫৩.৫ হেক্টর জমির শাকসবজি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাত হাজার ২৫১ জন কৃষক।</p> <p style="text-align:justify"><strong>মৎস্য  খাতের ক্ষতি</strong></p> <p style="text-align:justify">মৎস্য  অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, বন্যায় ৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যের পাঁচ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন মাছ এবং ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা মূল্যের ৪৫৫ মেট্রিক টন মাছের পোনার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ১০ কোটি টাকার জাল ও সাত কোটি ২৪ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।</p> <p style="text-align:justify">মৎস্য  খাতে শুধু সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলাতেই ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদরে আট কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৭৯৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সারা জেলায় এক হাজার ২২৪.৬৬ হেক্টর জুড়ে থাকা আট হাজার ২১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের চার হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮৫ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৭২ কোটি ১২ লাখ ছয় হাজার টাকা।</p> <p style="text-align:justify">এরপর সিলেট জেলার দুই হাজার ৪৯৮ হেক্টরজুড়ে থাকা ১৫ হাজার ৭৪টি পুকুর, দিঘি ও খামারের এক হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন মাছ ও ১৮১ মেট্রিক টন পোনা বন্যায় ভেসে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৯ কোটি ২৯ লাখ টাকার। মৎস্য  খাতে গোয়াইনঘাট উপজেলায় আট কোটি টাকার, জকিগঞ্জে ছয় কোটি ২০ লাখ টাকার এবং কোম্পানীগঞ্জে তিন কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">মৌলভীবাজারে বন্যায় ১১৫ হেক্টরের ৭১৮টি পুকুর, দিঘি ও খামারের ২২৫ মেট্রিক টন মাছ ও ৮৯ মেট্রিক টন পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকার। জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা শ্রীমঙ্গল। এখানে ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বড়লেখা উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকার।</p> <p style="text-align:justify">এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মৎস্য  অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বড় ক্ষতি হয়ে গেছে প্রথম দফা বন্যাতেই। মাছ, পোনা বা অবকাঠামো সব ক্ষেত্রেই। পরে সেটি আরো কিছুটা বেড়েছে।’</p>