<p style="text-align: justify;">দামিন-ই কোহ ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব গ্রাম, নিজস্ব দেশ। বহু কষ্ট করে জঙ্গল কেটে বন সাফ করে তারা এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। অতীতে যে মাটিতে কোনো মানুষের পা পড়েনি, সে মাটিকে তারা বাসযোগ্য করে গড়ে তুলেছিল। ফলিয়েছিল ধান, ভুট্টা, নানা ধরনের সবজি। সাঁওতালরা সুখে ছিল দামিন-ই কোহতে। নিজেদের আলাদা একটি জগৎ তৈরি করেছিল তারা। সে জগতে কোনো মহাজন, দালাল, জমিদার ছিল না। </p> <p style="text-align: justify;">কিন্তু কিছুকাল পরে ব্যবসায়ী ও মহাজন শ্রেণি দলে দলে আসতে শুরু করল সাঁওতাল পরগনায়। তারা সাঁওতাল পরগনায় ঢুকে বিপুল পরিমাণ ধান, সরিষা ও অন্যান্য তৈলবীজ গরুর গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে যেত। বিনিময়ে সাঁওতালদের দেওয়া হতো সামান্য লবণ, টাকা-পয়সা, তামাক অথবা কাপড়। এখানে চরমভাবে ঠকানো হতো তাদের।<br />  <br /> ফসল কাটার মৌসুম এলে মহাজন শ্রেণি গরুর গাড়ি ও ঘোড়া নিয়ে সাঁওতাল পরগনায় আসত। বার্ষিক আদায়ে আসার সময় মহাজনরা একটি পাথরে সিঁদুর মাখিয়ে নিয়ে আসত এবং সাঁওতালদের বলত, এ পাথরের ওজন নির্ভুল। এ পাথরের সাহায্যে ওজন করে মহাজনরা তাদের সব ফসল নিয়ে যেত। কিন্তু তারপরও আদিবাসীদের ঋণের বোঝা সামান্য হ্রাস পেত না। </p> <p style="text-align: justify;">মহাজনদের ঋণের সুদের হার ছিল অতি উচ্চ। একজন সাঁওতালকে ঋণের জন্য তার জমির ফসল, হালের বলদ, এমনকি নিজেকেও বলি দিতে হতো তার পরিবারের কাছ থেকে। আর সেই ঋণের দশ গুণ পরিশোধ করলেও পূর্বে যেরূপ ছিল পরেও সেইরূপই থাকত।</p> <p style="text-align: justify;">নিরীহ ও সরল আদিবাসীদের শোষণ ও নির্যাতনে মহাজন, দালাল, জমিদারদের পরোক্ষ মদদ দিয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী। এ কারণে আদিবাসীরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। </p> <p style="text-align: justify;">১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের চার ভাই সিদু-কানহু-চান্দ ও ভাইরোর নেতৃত্বে আদিবাসীরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সৈন্য ও তাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং একটি স্বাধীন-সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।<br /> সাওতাঁলরা তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলেও ইংরেজ বাহিনীর হাতে ছিল বন্দুক ও কামান। তারা যুদ্ধে ঘোড়া ও হাতি ব্যবহার করেছিল। এ যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল মারা যান। সাঁওতাল বিদ্রোহের লেলিহান শিখা ব্রিটিশ সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধে সিদু-কানহু-চান্দ ও ভাইরোর পর্যায়ক্রমে নিহত হলে ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হয় ও বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে।</p> <p style="text-align: justify;">৩০ জুন (রবিবার) ১৬৯তম সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। বিগত বছরগুলোতে হবিগঞ্জে জাঁকজমকভাবে দিবসটি পালন করেছেন সাঁওতালরা। কিন্তু করোনার জন্য কয়েক বছর ধরে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে না।</p> <p style="text-align: justify;">হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা-বাগানের শ্রমিক ও আদীবাসী ফোরাম হবিগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক স্বপন সাঁওতাল বলেন, ‘হবিগঞ্জের চা-বাগানগুলোতে প্রায় ৩৩ হাজার সাঁওতাল রয়েছে। আমাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। প্রতিবছর আমরা জাঁকজমকভাবে দিবসটি পালন করলেও এবার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আগামীতে বড় আকারে কর্মসূচি পালন করার লক্ষ্য রয়েছে।’<br />  </p>