<p style="text-align: justify;">প্রবাসে থাকতেন বাবা। এখন মুদি দোকানি। তবে ওই দোকানে খুব একটা মন বসে না ছেলের। বাবার পথ ধরেই প্রবাসে যাওয়ার স্বপ্ন। কথাবার্তা এগোয়। যাবেন মালয়েশিয়া। সব কিছু ঠিকঠাক। এবার যাওয়ার পালা। বাড়ি থেকে রওনাও হন। ঢাকায় গিয়ে জানতে পারেন, বিমানের টিকিটের কোনো ব্যবস্থা হয়নি।<br /> বাবাসহ স্বজনদের নিয়ে ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছিলেন তানভীর মোল্লা। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা, বাড়ি থেকে তখন প্রায় ৪০ কিলোমিটারের মতো দূরে। ট্রেনটি তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলার সংযোগস্থলের মেঘনা সেতুতে, ভৈরব ও আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি। এ সময় তিনি ট্রেনের সিট থেকে উঠে যান দরজায়। এরপর ট্রেন থেকে পড়ে যান নদীতে। </p> <p style="text-align: justify;">এ ঘটনার একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, তানভীর মোল্লা যেখানে পড়েন ঠিক ওই জায়গায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ‘মৃত অবস্থায়’ ভেসে ছিলেন। এরপর মরদেহটি ধীরে ধীরে সরতে থাকে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল দুই দিন চেষ্টা করেও তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি।</p> <p style="text-align: justify;">তানভীরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার পৌর এলাকার দেবগ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তারা অন্তত শেষবারের মতো তানভীরকে ছুঁয়ে দেখতে চান। তানভীরের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসছেন প্রতিবেশীরা। </p> <p style="text-align: justify;">তানভীর দেবগ্রামের মেরাজ মোল্লার ছেলে। সবে কিশোর বয়সে পা রেখেছেন। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। অনেক চিন্তাভাবনা শেষে পরিবার তাকে মালয়েশিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শুক্রবার রাতে তার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল।</p> <p style="text-align: justify;">পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় যাওয়ার পর জানতে পারেন তানভীরের জন্য বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ট্র্যাভেলস এজেন্সি। তারা জানিয়ে দেয়, আগামী পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে টিকিটের ব্যবস্থা করে তানভীরকে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় তানভীর ও তার স্বজনরা উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। ট্রেনটি ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন পার হওয়ার পর সিট থেকে উঠে দরজার সামনে আসেন তানভীর। মুহূর্তেই সে মেঘনা সেতুতে পড়ে যায়। সেখানে উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে সঙ্গে থাকা স্বজনরা বুঝতে পারেন, তানভীরই পড়ে গেছে। </p> <p style="text-align: justify;">এদিকে আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে নেমে তানভীরের বাবাসহ স্বজনরা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন। সন্ধ্যা থেকেই ডুবুরিদল তার মরদেহ উদ্ধারে কাজ শুরু করে। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মরদেহ পাওয়া না গেলে উদ্ধারকাজ ওই সময় পর্যন্ত বন্ধ করা হয়। পরে শনিবার সকাল থেকে আবারও উদ্ধারকাজ শুরু করে ডুবুরিদল। তবে সন্ধ্যা নাগাদ তানভীরের মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্বজন ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঘটনাস্থলসহ এর আশপাশের অনেক জায়গা ঘুরে দেখেছেন।</p> <p style="text-align: justify;">শনিবার বিকেলে তানভীরের বাড়িতে চলছিল শোকের মাতম। তার মাসহ অন্য স্বজনরা মেঘনার পাড় থেকে বাসায় ফিরেছেন। ছেলের জন্য বিলাপ করতে থাকা মায়ের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছিল না। অন্যরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। শেষবারের মতো তানভীরকে দেখতে আকুতি জানান পরিবারের সদস্যরা।</p> <p style="text-align: justify;">তানভীরের খালা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘বিমানের টিকিটের কারণে যেতে না পারার কথা তানভীর আমাকে ফোনে জানায়। তখন তাকে অনেকটা ভারাক্রান্ত মনে হচ্ছিল। আমি তাকে সান্ত্বনা দিই। ট্রেনে করে আসার সময় তার বাবাকে ওয়াসরুমে যাওয়ার কথা বলে সিট থেকে উঠে যায়। এরপরই সে কিভাবে যেন ট্রেন থেকে পড়ে যায়।’</p> <p style="text-align: justify;">তানভীরের আত্মীয় তানজীব হাসান বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় অসাবধানবশত কিংবা মাথা ঘুরিয়ে সে পড়ে যায়। ঘটনার পর সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে মেঘনা নদীতে পড়ে মারা যায়। বেশ কিছু সময় তার মরদেহ ভেসে থাকতে দেখা যায়। তবে উদ্ধারকাজ শুরু করতে করতে মরদেহ স্রোতে ভেসে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন রবিবারও তারা উদ্ধার তৎপরতা চালাবেন।’ </p> <p style="text-align: justify;">আখাউড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মো. ইশান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি তানভীরের বাসায় যাই। পরিবারটিতে এখন শোকের মাতম। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা সবাই এখনো মরদেহের অপেক্ষায় ঘটনাস্থলে রয়েছেন। এখনো মরদেহ উদ্ধার হয়নি বলে জানতে পেরেছি।’ </p> <p style="text-align: justify;">কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘নৌ পুলিশসহ আমরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে নদীতে অনেক স্রোত থাকায় মরদেহ দূরে কোথাও ভেসে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রবিবারও আমাদের উদ্ধার অভিযান চলবে।’  <br />  </p>