<p>ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের। ঝড়ের কবলে মারা পড়েছে হরিণসহ অন্যান্য প্রাণী। সোমবার (২৭ মে) বিকেলে বনের কটকা ও দুবলা এলাকা থেকে দুটি মৃত হরিণসহ ৯টি আহত হরিণ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা।</p> <p>এ ছাড়া রিমেলের তাণ্ডবে বনের অভ্যন্তরে টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণ পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে অন্তত ৮০টি মিষ্টি পানির পুকুর। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।</p> <p>ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার। এই গতিবেগে উপকূল এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এবারও প্রকৃতির ঢাল হয়ে দাঁড়ায় সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ঝাপটা সামলে উপকূলের বিপুলসংখ্যক মানুষ ও জনপদকে রক্ষা করেছে এই ম্যানগ্রোভ বন। তবে ঝড়ের তাণ্ডবে সুন্দরবনের পুরো প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। </p> <p><img alt="৩৫৪৬" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/timir/1/KALERKANTHO022 (1).jpg" width="1000" /></p> <p>মিহির কুমার দো বলেন, রবিবার বিকেল থেকে একটানা ২০ ঘণ্টা ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বন বিভাগের বিভিন্ন অফিসসহ টহল বোট, টিনের চালা, জানালা-দরজা, সোলার প্যানেল ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে কটকা অভয়াণ্যে অফিস ঘাটের জেটি ও পুকুর বঙ্গোপসাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুবলা, কটকা, কোচিখালি, বগিসহ বিভিন্ন বন অফিসসহ ২৫টি টহল ফাঁড়ির রান্নাঘরসহ অবকাঠামোর টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে।</p> <p>সুন্দরনে অভ্যন্তরে মিঠা পানির পুকুরগুলোও জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠা পানির উৎস পুকুরে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বনকর্মীদের পাশাশাশি বাঘ, হরিণসহ বন্য প্রাণীরাও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। সুন্দরবনের বন্য প্রাণীরা অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে মারা যাওয়ারও খবর মিলেছে।</p> <p><img alt="২৩৫" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/timir/1/kalerkantho.jpg" width="1000" /></p> <p>সোমবার বিকেলে সুন্দরবন থেকে দুটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়। এ সময় সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে আহত আরো ৯টি হরিণ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা। তবে হরিণের পাশাপাশি আরো বণ্য প্রাণী মারা যেতে পারে উল্লেখ করে বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বলেন, সেই সব মৃত প্রাণীর খোঁজে বনরক্ষীরা তৎপর রয়েছেন।</p> <p>ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের একমাত্র করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের নানা অবকাঠামো। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠের পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে তছনছ হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। তবে পুরো সুন্দরবনের গাছপালাসহ কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়।</p> <p><img alt="২৩৫৩৪৫" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/timir/1/KALERKANTHO024 (1).jpg" width="1000" /></p> <p>খুলনার কয়রা সবুজ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, সুন্দরবন যেন বাংলাদেশের উপকূল এলাকায় প্রকৃতি নির্মিত দেয়াল। প্রতিবারই ঝড়ের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করে সুন্দরবন। এবারও তা-ই করেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ঠেকিয়ে দিয়ে খুলনার কয়রা অঞ্চলকে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছে। তবে জলোচ্ছ্বাসের কারণে সুন্দরবন প্লাবিত হয়েছে। গাছপালা ও বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পানিতে লবণাক্ততার কারণে সামনের দিনগুলোতে পশুপাখির পানির সংকট তৈরি হতে পারে।</p> <p>বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রকৃতির ঢাল হিসেবে কাজ করে সুন্দরবন। এবারও সেটি করেছে। তবে বনের ভেতর গাছপালা ও পশুপাখির ক্ষতি হয়েছে।</p>