<p style="text-align: justify;">ঠাকুরগাঁওয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে দায়ন ঋষি নামে এক আদিবাসী নারী শ্রমিককে দিনভর মারধর ও শারিরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে আমজাদ হোসেন লিটন নামে এক যুবকসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন দায়নের স্বজন ও প্রতিবেশিরা। তবে পুলিশ বলছে, এটি হত্যা না আত্মহত্যা এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। </p> <p style="text-align: justify;">গতকাল বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের পরিষদ পাড়ার উত্তরে একটি লিচু বাগান থেকে ওই আদিবাসী নারী শ্রমিক দায়ন ঋষির ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, যারা তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারাই হত্যা করার পর গলায় ফাঁস গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">নিহতের পরিবারের স্বজন ও প্রতিবেশিদের জানান, কয়েকদিন পূর্বে আমজাদ হোসেন লিটনের বাড়িতে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় কয়েকলক্ষ টাকা চুরি হয়। চুরির সন্দেহে মঙ্গলবার সকালে দায়ন ঋষির ছেলে রাজেন ঋষিকে চুরির অপবাদ দিয়ে নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দিনভর বেধধরক মারধর করে আমজাদ হোসেন লিটন ও তার সহযোগী রনি, উৎপল, রকি বাপ্পিসহ আরো ৪-৫ জন। তাদের ছাড়াতে স্বজন ও প্রতিবেশিরা ছুটে গেলে তাদের গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে ফেরত দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align: justify;">নিহত দায়ন ঋষির ছেলে রাজেন ঋষি বলেন, মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে আমজাদ হোসেনসহ আরো বেশ কয়েকজন তাদের বাড়িতে এসে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর চুরির অপবাদ দিয়ে বেধরক মারধর করতে থাকে। সে চুরি করেনি এমন কথা জানালেও আমজাদ হোসেন আরো ক্ষিপ্ত হন এবং পরবর্তীতে দুপুরে তার বাবা বিষ্ণু ও মা দায়ন কেও তুলে নিয়ে এসে মারধর করতে থাকে। চুরির কথা স্বিকার না করলে পরে সন্ধ্যায় তাদের একটি পেট্রোল পাম্পের পিছনে নিয়ে গিয়ে ধারালো ছুড়ি দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি ও ভয় দেখানো হয়। </p> <p style="text-align: justify;">রাতে সদর থানার বাইরে নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর বাসা ফেরার সময় পথে আবারো তার মা দায়নকে ডেকে নিয়ে যায় তারা। এরপর থেকে সারারাত বাসায় ফেরেনি রাজেনের মা দায়ন ঋষি। অনেক খোঁজাখুজি করেও কোথাও তাকে পাওয়া যায় নাই। পরদিন বুধবার সকালে একটি লিচু বাগানের গাছে তার ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাদের খবর দেয়।</p> <p style="text-align: justify;">দায়ন ঋষির স্বামি বিষ্ণু ঋষি জানান, বিনা অপরাধে তাদের মারধর করা হয়েছে। শুধু মাত্র সন্দেহ করে তার ছেলে, স্ত্রী ও তাকে অনেক মারধর করেছে আমজাদ ও তার সহযোগীরা। হাত পা ধরে ক্ষমা ও অনেক আকুতি করেও কিছু লাভ হয়নাই উল্টো মারধরসহ অমানুষিক নির্যাতন করে তারা। নির্যাতন করে তার স্ত্রী দায়নকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">জেসপিনা নামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের একজন জানান, ময়নাতদন্তের পর মৃতার শরিরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের ক্ষত দেখা গিয়েছে। তাকে হয়তো লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছিল, তা নাহলে এমন ক্ষত হতো না। পুলিশও এই চিহ্ন দেখেছে। </p> <p style="text-align: justify;">নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশিদের দাবি হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে দায়নকে গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। </p> <p style="text-align: justify;">জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি জাকোপ খালকো জানান, কোন কিছু ঘটলেই আদিবাসীদের উপর নির্যাতন, অত্যাচার শুরু হয়। আদিবাসীরাও এই সমাজের মানুষ। কেউ কোন অন্যায় করে থাকলে তার জন্য দেশে আইন আদালত আছে। কিন্তু আইন অমান্য করে গায়ের জোড়ে কারো উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নির্যাতন করা বেআইনি। দায়ন হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করা হোক।</p> <p style="text-align: justify;">স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দোলন কুমার মজুমদার জানান, এই ঘটনাটি দু:খজনক। সন্দেহমূলক ভাবে ওই পরিবারের তিনজনকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আইনগত ভাবে মারধরের এখতিয়ার নেই কারো, কোন অভিযোগ থাকলে তা থানায় জানানো উচিত ছিল। এঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করেন তিনি। </p> <p style="text-align: justify;">অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,সদর সার্কেল মিথুন সরকার জানান, বুধবার দুপুরে মৃতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধিন রয়েছে, এবিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। দোষিরা কেউই ছাড় পাবে না।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে ঘটনার পর থেকেই স্বপরিবারে পলাতক রয়েছে আমজাদ হোসেন লিটন ও তার পরিবারের লোকজন। ঘটনাটি বাড়াবাড়ি না করার জন্য কৌশলে বিভিন্ন ভাবে চাপও দেওয়া হচ্ছে আদিবাসী ওই পরিবারটিকে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।</p>