<p>গো-খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশাহারা পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার পশু খামারিরা। এতে পশু পালনে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেক খামারি। ভুসি, ক্যাটল বুস্টার, গম ইত্যাদির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গরুকে খাদ্যের চাহিদার তুলনায় কম খাওয়ানো হচ্ছে। এতে দুধ উৎপাদন ও পশুর মোটাতাজাকরণে প্রভাব পড়েছে।</p> <p>খামারিরা বলছেন, এবার কোরবানির ঈদে চাহিদার তুলনায় মাংস উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার কৃষকরা গবাদি পশুসহ বহু মানুষ হাঁস-মুরগি, কবুতর, ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন পশু-পাখি পালন করেন। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারাও পশু পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ ছেড়ে দিয়েছেন পশু পালন। অনেক খামারি আর পশু পালন করবেন না বলে জানিয়ছেন।</p> <p>উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে হাজারের বেশি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে ষাঁড়, গাভি, বলদ, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে ৯ হাজার ৬৪৬টি পশু কোরবানির জন্য রয়েছে।</p> <p>গো-খাদ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে উপজেলার অন্তত ১৫ জন গরুর খামারি বলেন, খড় ও ঘাসের পাশাপাশি গরু-ছাগলকে ভুসি, চালের খুদ, ধানের কুঁড়া এবং বিভিন্ন কম্পানির তৈরি কৃত্রিম ফিড (দানাদার খাদ্য) খাওয়ানো হয়। অন্তত পাঁচজন গো-খাদ্য ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি কেজি গমের ভুসিতে ছয় টাকা, বুটের খোসায় ১০ টাকা, চালের খুদে ছয় টাকা এবং দানাদার ফিডে সাত টাকা বেড়েছে।</p> <p>বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন মাস আগেও প্রতি বস্তা (৩৭ কেজি)  ভুসি বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকা, বুটের খোসা প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) এক হাজার ৩০০ টাকা, দানাদার ফিড প্রতি বস্তা (২৫) এক হাজার ২২৫ টাকা ও খুদ প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) এক হাজার ৪৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি গমের ভুসির দাম ৪৬ টাকা, বুটের খোসা ৫২ টাকা, চালের খুদ ২৯ ও দানাদার ফিডের দাম ৪৯ টাকা ছিল। কিন্তু দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি গমের ভুসি ৫২ টাকা, বুটের খোসা ৬২ টাকা, চালের খুদ ৩৮ টাকা ও দানাদার ফিড ৫৫ টাকা হয়েছে। এসব গো-খাদ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন মাসে প্রতি কেজি গমের ভুসিতে ছয় টাকা, বুটের খোসায় ১০ টাকা, চালের খুদে ছয় টাকা ও দানাদার ফিডে ৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।</p> <p>স্থানীয় গাঁওখালী বাজারের গো-খাদ্য ব্যবসায়ী মুন্না বাহাদুর বলেন, ‘মানুষ এখন আগের তুলনায় গরুর জন্য দানাদার ফিড, ভুসি ও খুদ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে গো-খাদ্যের দাম প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। ২০২০ সালে যে ভুসি ৩২ টাকা কেজি বিক্রি করেছি তা এখন ৫২ টাকা, ৩৮ টাকার বুটের খোসা ৬২ টাকা, ১৬ টাকার চালের খুদ ৩৮ টাকা এবং ৩২ টাকার দানাদার ফিড ৫৫ টাকায় উঠেছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বকেয়া ওঠানো কঠিন হয়ে গেছে।’</p> <p>পশুর খুচরা খাদ্য বিক্রেতা খোকন মোল্লা বলেন, ‘খাদ্যের সংকট নেই। তবে মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। কৃষকরা এখন আগের তুলনায় খাদ্য কম কিনছেন।’</p> <p>জেলার নাজিরপুর উপজেলা বড় গরু খামারের মালিক মাছুম বাবুল বলেন,‘আমার খামারে গাভি ও ষাঁড় মিলিয়ে ২৫টি গরু রয়েছে। খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি। খামার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আগে যেখানে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার খরচ হতো সেখানে এখন চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।’</p> <p>নাজিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে গো-খাদ্যের দাম একটু বেশি। এতে প্রান্তিক খামারি ও কৃষকরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। তাই গবাদি পশু পালনকারী ও খামারিদের দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমিয়ে ঘাস উৎপাদনের দিকে মনোযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি।’</p>