<p>জাটকা সংরক্ষণে টানা দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে। এতে দেশের অন্য ৬টি অভয়াশ্রমের মতো চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই মাসের জন্য পেশা হারিয়ে বেকার ছিলেন এই জনপদেও প্রায় অর্ধলক্ষ জেলে। তবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে, তাই আবারো চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। </p> <p>এরইমধ্যে নৌকা ও জাল মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন তারা। অন্যবারের চেয়ে জাটকা সংরক্ষণে এবারে অভয়াশ্রম কার্যক্রম অভিযান সফল। এমনটা দাবি করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে জাটকা রক্ষা পাওয়ায় বাড়বে ইলিশের উৎপাদন। এমন ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন মৎস্যবিজ্ঞানি।</p> <p>চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনাপাড়ের গ্রাম বহরিয়া। নদীপাড়ের এই গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষই জেলে। তার আশপাশের আরো ৮-১০টি গ্রামের মানুষের ঠিক একই পেশা। তাই কান পাতলে শোনা যায় মাছ ধরা প্রধান উপকরণ নৌকা মেরামত করতে হাতুড়ি বাটালের খুটখাট শব্দ। কারণ, ২ মাসের নিষেধাজ্ঞায় অলস পড়েছিল মাছ ধরার এই নৌকা। তাই মেরামতের পর জেলেরা এসব নৌকা নিয়ে আবারো মাছ ধরতে ছুটে যাবেন নদীতে। এমন চিত্র চাঁদপুর সদরের বহরিয়ার মোহাম্মদ উল্লাহ‘র মতো আশপাশের অন্য জেলেদের মাঝেও সেই একই প্রস্তুতি। তাদের কেউ জাল সেলাই, আবার কেউ সেই জাল মেরামত করছেন। যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা ও মেঘনার অভয়াশ্রমে প্রায় দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বেকার ছিলেন এসব জেলে। এখন তাদের চোখে ও মুখে তাড়া করছে কখন ছুটে যাবেন নদীতে। </p> <p>চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, সরকারি তালিকায় থাকা ৪৪ হাজার জেলের মধ্যে এবারে ৪০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন মাত্র ৪০ হাজার জেলে। শুধু মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাসই নয়, তার আগে ফেব্রুয়ারি এবং আগামী মে মাসজুড়ে মোট ৪ মাস খাদ্য প্রণোদনার এই চাল পাবেন জেলেরা। চাঁদপুরের জেলে নেতা শাহআলম মল্লিক ও মানিক দেওয়ান জানান, কেবলমাত্র চাল পেলেও অন্যান্য খাদ্য উপকরণ ক্রয় করতে এরইমধ্যে জেলেরা ধারদেনায় জর্জরিত। তাছাড়া জাল ও নৌকা মেরামত করতেও মহাজন, সমিতি এবং এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে তাদের। আর এমন পরিস্থিতিতে জালে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়লেই হাসি ফুটবে এসব জেলের মুখে। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে আগামী ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত। তারপর জাল ও নৌকা নিয়ে জলের সঙ্গে গড়ে উঠবে পুরনো সেই মিতালি। </p> <p>এদিকে, নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, অন্যবারের চেয়ে এবারের নিষেধাজ্ঞাকালিন সময়ে আরো বেশি তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ নদীতে কঠোর অবস্থানে ছিল। তাই অন্যবছরের চেয়ে অধিকহারে রক্ষা পেয়েছে জাটকা। এসময় জাটকা নিধনের দায়ে শুধুমাত্র নৌ পুলিশের হাতে দেড়হাজারের বেশি জেলে আটক হয়েছে। সংখ্যায় যা গতবছরের চেয়ে দেড়গুণ বেশি। </p> <p>অন্যদিকে, দেশেল বিশিষ্ট মৎস্যবিজ্ঞানি ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, মৌসুমের এই সময় দেশে প্রচণ্ড তাপদাহ চলতে থাকলেও ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত হবে না। কারণ, এই মাছ গভীর পানিতে অবস্থান এবং পরিভ্রমনশীল। তাই ঝাঁকবেধে চলা ইলিশের দল অভয়াশ্রমের মিঠা পানি ছেড়ে দক্ষিণের সাগরে চলে গেছে। পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত এবং উজানের পানির স্রোত সাগরমুখি হলে সেই ইলিশের দল আকার পরিবর্তন করে আবারও নদীর ঘোলা পানিতে ছুটে আসবে। তাই আশা করা যাচ্ছে, অতীতের রেকর্ড ভেঙে এবছর ইলিশের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। </p> <p>চাঁদপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জাটকা সংরক্ষণে দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় গত পহেলা মার্চ। আর দুই মাসের এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যরাতে।</p>