<p>সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগেই এই উত্তাপ ইস্যুতে স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বিধা-বিভক্তি তৈরি হয়েছে সাধারণ ভোটার ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মধ্যে। নেপথ্যের মূল কারণ একজন প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) সরাসরি হস্তক্ষেপ। বেলকুচি উপজেলায় এমপির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্টাফ চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া ইস্যুতে সেখানে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।</p> <p>নির্বাচন কমিশনে সাধারণ ভোটার ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের পক্ষ থেকে আনীত অভিযোগে বলা হয়েছে, এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ রয়েছে এমপির কোনো আত্মীয় কিংবা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এমন কাউকে প্রার্থী না করার। কিন্তু ভিন্ন কৌশলের কারণে তুমুল সমালোচনার মুখে এখন সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মমিন মন্ডল। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় এমপির কোনো প্রার্থীর পক্ষে দৃশ্যমান হয়ে কাজ না করার বিধি-নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ইসির আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বীরদর্পে ভোটারদের তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নানা-ধরণের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলেও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।</p> <p>জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়তে প্রার্থী হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম। এই ব্যক্তি বর্তমান এমপি মমিন মন্ডলের আস্থাভাজন ও তার মালিকানাধিন মন্ডল গ্রুপের পোশাক শিল্পের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) পদে কর্মরত। এলাকায় গুঞ্জন ডালপালা মেলেছে নিজ আধিপত্য ধরে রাখতে তার অধীনস্থ কর্মকর্তাকে প্রার্থী করেছেন এমপি নিজেই। নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করলে  কেন্দ্রের ও নেত্রীর বিরাগভাজন হতে পারেন, তাই কৌশলী পথ হিসেবে অনুগত ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছেন। এ নিয়ে  নিজ এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে এমপি আবদুল মমিন মন্ডল নিজেই। </p> <p>আগামী ৮ মে ভোট হবে উপজেলা পরিষদের প্রথম দফায়। এ ভোট উপলক্ষে আগামীকাল থেকে প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে মাঠে প্রচারণায় নেমে পড়বেন। এর আগেই আলোচনায় বর্তমান এমপির ঘনিষ্ঠ সহচর প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম। এমপির ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ার নেপথ্যের কারণ অনেকগুলো। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হওয়া ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম কর্মজীবনের শুরু থেকেই মন্ডল গ্রুপে কর্মরত রয়েছেন। এই প্রার্থী একাধারে সংসদ সদস্যের মালিকানাধীন মন্ডল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কটন ক্লাব বিডি, কটন ক্লথ ও কটন বিডি’র মহাব্যাবস্থাপক অপারেশন হিসেবে কর্মরত। দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি হওয়ার পর থেকেই আব্দুল মমিন মন্ডলের কাছাকাছি আসতে শুরু করেন। লক্ষ্য, জনপ্রতিনিধি হওয়া।</p> <p>এ জন্য তিনি নানা ছলচাতুরিতে বেলকুচির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে এমপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ঝোপ বুঝে বাগিয়ে নেন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের টিকিট। পরবর্তী টার্গেট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এর পদ। অথচ বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এই আমিনুল। </p> <p>এ জন্য উপজেলা নির্বাচনের পোস্টার, ব্যানার ও ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে আগেই প্রচারণায় নেমে পড়েন। এর পেছনে এমপির প্রছন্ন সমর্থন ছিল বলে এমপির ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা যায়। এমনকি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নিজেকে আব্দুল মমিন মন্ডল এমপির মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কোণঠাসা করতে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। আর আব্দুল মমিন মন্ডল এমপি নিজের পক্ষের নেতাকর্মীদের ইতিমধ্যেই আমিনুল ইসলামের পক্ষে নামতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে মোতাবেক এমপি’র ব্যক্তিগত সহকারীসহ সমর্থিত নেতাকর্মীরা আমিনুল ইসলামের পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে নির্বাচনের লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকছে না বলেও প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হচ্ছে।</p>