<p style="text-align: justify;">রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চল। ঢাকা-টঙ্গী একই সংস্কৃতিতে অবস্থান করায় অপরাধীদেরও রয়েছে একটি সমন্বিত সেতুবন্ধন। গড়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীদের একটি বিশাল চেইন অব কমান্ড। সময়ের পরিক্রমায় টঙ্গীতে এখন ৫২টির মতো কিশোর গ্যাং সক্রিয়। দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠা এই কিশোর অপরাধীরা পুলিশ শুধু নয় র‌্যাবের উপর হামলাও করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় এক শ্রেণির গডফাদার রাজনীতিবিদ প্রধান অবলম্বন হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কেও মুখ খুললে আর রক্ষা নেই। ফলে মাদক, অস্ত্র, চাঁদাবাজী, দখল বানিজ্য এর সবই নিয়ন্ত্রণ করছে এই বিশাল কিশোর গ্যাং বাহিনীর ৫২টি সক্রিয় গ্রুপ।</p> <p style="text-align: justify;">অনুসন্ধানে জানা যায়, টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, গরীব শিশু-কিশোরের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কিশোর গ্যাং। উঠতি বয়সিদের  ত্রাসের রাজ্যে পরিণত হয়েছে রাজধানী লাগোয়া এই এলাকাটি। অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিশোর গ্যাং এলাকাবাসীর জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে মূর্তিমান আতঙ্ক। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এতটাই ভয়ডরহীন এই কিশোররা, আইনও যেন এদের কাছে ‘হাতের মোয়া’। </p> <p style="text-align: justify;">চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন-ধর্ষণ, চোরাচালান এমন কোনো অপরাধ নেই, যা এই কিশোররা করে না। এদের হাত থেকে রক্ষা পায় না পুলিশ-সাংবাদিক-শিক্ষক কেউই। টঙ্গী ও এর আশপাশে ২২টি বস্তি এলাকায় এদের আস্তানা। আর এসব আস্তানা থেকেই তারা নিয়মিত অপরাধ করে চলছে বাঁধাহীন ভাবে। তাদের প্রধান অফিস টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীর এলাকার একটি বস্তি। নিরাপদে এই অপরাধ সংঘটনের জন্য এই চক্র আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা কতিপয় সাংবাদিককেও ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করছে। যে কোনো অভিযান ও সংবাদের আগাম খবর তারা সরবরাহ করে। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাঁধার সৃষ্টির মাধ্যমে অপরাধকে লালন করছেন তারা।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>টঙ্গীতে র‌্যাবের ওপর হামলা চালায় কিশোর গ্যাং</strong></p> <p style="text-align: justify;">২০২৩ সালের ১ মার্চ বুধবার বিকেলে টঙ্গীর বনমালা বিলে র‌্যাবের কাজে বাধা দেওয়া এবং র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় ১৩জন। এ ঘটনায় র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানায়।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>আরো কিছু ঘটনা</strong></p> <p style="text-align: justify;">২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় টঙ্গীর মিরাশপাড়া নদীবন্দর এলাকায় একদল কিশোর-তরুণের ছুরিকাঘাতে আহত হন রিকশাচালক বাবার একমাত্র ছেলে হাবিবুর রহমানসহ (১৮) ৯ জন। পরে হাসপাতালে মারা যান হাবিবুর। বাকিরা সুস্থ হন দীর্ঘদিনের চিকিৎসায়। হাবিবুরকে হত্যার ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে পরিবার। পরে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তাঁদের মধ্যে চারজন রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার। বাকি ছয়জন টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকার। বাকি আসামিদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পেয়ে গ্রেপ্তার করতে না পারায় অব্যাহিত দেওয়া হয় তদন্ত থেকে।</p> <p style="text-align: justify;">২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাতে পাগাড় ফকির মার্কেট এলাকায় একটি কিশোর দলের ছুরিকাঘাতে খুন হয় স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. শুভ (১৫)। ১৫ সেপ্টেম্বর পাগাড় আলেরটেক এলাকায় ঠিক একইভাবে মহড়া দেয় ৩০ থেকে ৪০ জনের আরেকটি কিশোর দল। সেখানে ছুরিকাঘাতে খুন হন মিলন নামের এক পোশাকশ্রমিক। এ ছাড়া তুরাগ নদীর তীর এলাকায় রয়েছে আলাদা একটি স্বশস্ত্র কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এরা টঙ্গী ও রাজধানী ঢাকার অপরাধীদের সমন্বয়ে একটি বিশাল নেক্সাস গড়ে তুলেছে। মাদক, অস্ত্র ও ফুটপাতে বাজার বসিয়ে কাঁচা টাকা আদায়ে এরা ব্যবহৃত হয়।</p> <p style="text-align: justify;">একটি গোপন সূত্র বলছে, জনৈক কিশোর গ্যাং-এর এক গডফাদার অনেক লোকের জমি দখল করেছেন। অন্যের জমি দখল করে বহুতল ভবন, সরকারী জমিতে বাজার বসিয়ে লাখ লাখ কাঁচা টাকা আয় করছেন প্রতিদিন। একে একে তিনটি খুনও করেছেন তিনি। একটি খুনের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় তার নামও এসেছে। অথচ কোন খুনের ঘটনায় তিনি আসামি নন। </p> <p style="text-align: justify;">এসব বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে একাধিক সাংবাদিক হেনস্ত হয়েছেন। একজন সিনিয়র সাংবাদিককে তুলে নিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। একাধিক সাংবাদিকদের নামে মাদকব্যবসায়ীদের স্বাক্ষী বানিয়ে ও ভুয়া পরিচয় দিয়ে বাদী বানিয়ে মামলাও হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেলও খেটেছেন ওই কিশোর গ্যাং এর গডফাদারদের ইশারায়। ফলে টঙ্গীতে এখন ভয়ঙ্কর অপরাধ হলেও সাংবাদিকরা কোনো প্রতিবেদন করতে সাহস পান না।</p> <p style="text-align: justify;">এ সব বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ( অপরাধ দক্ষিন) মো. ইব্রাহীম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। মাদক ও কিশোর গ্যাংসহ সকল ধরণের অপরাধীর তথ্য পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।</p>