<p>ফরিদপুরের সালথায় এলাকায় প্রভাববিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, মাঝারদিয়া গ্রামে এলাকায় প্রভাববিস্তার নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হামিদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহসভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাহিদুজ্জামান সাহিদের বিরোধ চলে আসছিল। স্থানীয়ভাবে সাহিদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও হামিদের গ্রুপের নেতৃত্ব দেন তার ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন।</p> <p>ওই দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান বিরোধের জের ধরে শনিবার বিকেলে উভয় গ্রুপের কয়েক শ লোক দেশীয় অস্ত্র, ঢাল, কাতরা, ভেলা ও টেঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। সংঘর্ষ চলাকালে হামিদের সমর্থক বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী ও আজিজ মোল্যার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট  চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।</p> <p>এতে উভয় গ্রুপের অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারী (৭২), আহাদ ব্যাপারী (৩২), শাখাওয়াত ব্যাপারী (২৫), মজিদ ব্যাপারী (৩০), আলমগীর ফকির (৩৮), আজিজ মোল্যা (৪৭), বাসার মোল্যা (৫৫), হাসিবুল মোল্যা (২২), হানিফ মোল্যা (৪২), সেন্ট ব্যাপারী (৩১), ফরিদ মোল্যা (৫০), চানমিয়া শেখ (৪০), মনির মোল্যা (২৫), আকবর শেখ (৩২), হৃদয় মোল্যা (২০), আমরান মোল্যা (২৮), রেজাউল শেখ (৫০) ও সুমন মোল্যাসহ (৩৫) অন্তত ২০ জনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।</p> <p>তবে সংঘর্ষের ঘটনায় এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে। রবিবার দুপুরে হাবিবুর রহমান হামিদের ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সাহিদ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। শনিবার বিকেলে সাহিদের সমর্থক ইউপি সদস্য কবির হোসেনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা রায়হান ব্যাপারীর ওপর হামলা চালিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দেয়। এমনকি তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় আমার দলের লোক ঠেকাতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।</p> <p>ইউপি সদস্য কবির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, শনিবার বিকেলে ফারুকের সমর্থক বক্কর মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে আমার সমর্থক মনির ও সুমন মাঝারদিয়া বাজারে যাচ্ছিল। এ সময় তাদের ধাওয়া দেয় ফারুক ও বক্কর মেম্বারের লোকজন। এ নিয়ে পরে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আমাদের সমর্থক জালাল শিকদারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।</p> <p>রবিবার দুপুরে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৭ রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখনো উভয় পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p>