<p>সোমেশ্বরী নদীর শাখা নদী ঢেউফা। শুকনো মৌসুমে নদীর বুক খুবলে নেওয়া হচ্ছে বালু। নদীর তলদেশ হচ্ছে খানাখন্দ। বালু পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক চলাচলে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে কাঁচা সড়ক। এতে অন্যান্য যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনে নদীর দু'পাড়ে শতশত বাড়িঘর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।</p> <p>সরেজমিন দেখা গেছে, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ‍উপেক্ষা করে চলছে বালু উত্তোলন। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে শেরপুরের শ্রীবরদীর গারো পাহাড়ের বাবেলাকোনা গ্রামের ঢেউফা নদীর দু' পাড়ের শতশত বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশসনের কর্মকর্তাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমন তথ্য। </p> <p>স্থানীয়রা জানান, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পোড়াকাশিয়া হয়ে নেমে এসেছে সোমেশ্বরী নদীর শাখা ঢেউফা নদী। এ নদী বাবেলাকোনা, মেঘাদল ও কর্ণঝোড়া বাজারের পাশ দিয়ে প্রবেশ করেছে শ্রীবরদীর অভ্যন্তরে। দীর্ঘদিন যাবত ঢেউফা নদীর বাবেলাকোনা এলাকা থেকে চলছে বালু উত্তোলন। এতে কর্ণঝোড়া হতে বাবেলাকোনা, হারিয়াকোনা ও দীঘলাকোনাসহ বর্ডারে যাওয়ার সড়কের বেশ কিছু অংশ নদীতে ভেঙে গেছে। ফলে চলাচলকারীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে বিকল্প সড়কে। সম্প্রতি বাবেলাকোনা ব্রিজটিও পড়েছে হুমকির মুখে। এখন বর্ডারের নোম্যান্স এলাকা থেকেও উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। অভিযোগ রয়েছে, সিংগাবরনা ইউনিয়নের মেঘাদল গ্রামের বালু মাসুদ, বগুলাকান্দি গ্রামের ইয়াছিন ও কর্ণঝোড়া গ্রামের বিপ্লব দীর্ঘদিন যাবত ঢেউফা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। সন্ধ্যা হলেই শুরু করে শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে বালু উত্তোলন। চলে সারা রাত। ভোরে ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে এসব বালু নেওয়া হয় বিভিন্ন এলাকায়।  </p> <p>বাবেলাকোনা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ‘আমরা বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারি না। কিছু বললেই তাঁরা আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করে। হাট বাজারে যেতে দেয় না। আমাদের কাউকে পেলেই মারধর করে।’ </p> <p>এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বালু ব্যবসায়ী মাসুদ বলেন, ‘আমি বালুর ব্যবসা করি। তাই নদী থেকে বালু তুলি।’ </p> <p>বাবেলাকোনা আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, ট্রাক, ট্রলি দিয়ে বালু পরিবহনে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা হেঁটেও চলাচল করতে পারে না। অন্যান্য যানবাহন চলাও কষ্টকর। এ ব্যাপারে ইউএনওকে বলেও কোনো লাভ নেই। </p> <p>বাবেলাকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও আদিবাসী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র মান্দা বলেন, ‘গ্রামের কেউ বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলেই তাঁরা তাকে অপমান করে। এজন্য নিজেদের ক্ষতি নিরবেই মেনে নেয়। তবে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই নেতা।’</p> <p>সিংগাবরণা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুজ্জামান বলেন, ‘বালু মাসুদের চেয়েও বিপ্লব ভয়ংকর। তাঁরা কিছুই মানে না।’</p> <p>ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা সাদেক হোসেন বলেন, ‘বালু মাসুদ একাই না আরো অনেকে এর সাথে জড়িত। তবে বালুসহ কোনো গাড়ি পেলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’ </p> <p>শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, ‘আমরা বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ </p>