<article> <p style="text-align: justify;">ভোরে ঘন কুয়াশার যখন পথঘাট ঢাকা, ঠিক তখন করতোয়ার হিম শীতল জলে কিছু মানুষের স্বর ভেসে আসে। কুয়াশায় কাউকে দেখা না গেলেও শোনা যাচ্ছে পানির খলখল আওয়াজ। আরেকটু কাছে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মধ্যে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা পঞ্চগড়ের বালু ও পাথর শ্রমিক। যে সময়ে সাধারণ মানুষ গরম কাপড় পরে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে তাঁরা কেউ খালি গায়ে, কেউ একটি শার্ট গায়ে জড়িয়ে নেমে পড়েছেন <img alt="শীতে সংকটে বালু-পাথর শ্রমিকরা" height="254" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/january/21-01-2024/Rif/21-01-2024-p12-2.jpg" style="float:left" width="300" />নদীর বরফ শীতল জলে। পানির নিচ থেকে তুলছেন বালু ও পাথর। তবে খুব বেশি সময় সেখানে টিকতে পারছেন না তাঁরা। এক ঘণ্টা পর পর পারে উঠে আগুনে হাত-পা সেঁকে আবার নামছেন নদীতে। এভাবে সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বালু ও পাথর তোলেন তাঁরা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করতোয়াসহ বিভিন্ন নদীতে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক এভাবেই নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শীত এলেই বাড়ে তাঁদের সীমাহীন কষ্ট। বেশির ভাগ শ্রমিক এই সময় বেকার সময় পার করেন। তবে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে অনেককেই শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করেই কাজ চালিয়ে যেতে হয়।</p> </article> <p style="text-align: justify;">আগে দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। তাই পরিবার নিয়ে কোনো মতে চলছে তাঁদের টানাপড়েনের জীবন। জেলায় এবার সরকারিভাবে সাড়ে ২৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে পাথর ও বালু শ্রমিকরা এসব সহায়তা পাননি বলে জানান তাঁরা। দিনভর নদীর জলে নেমে কাজ করে যা মজুরি মেলে, তা নিয়েই বিকেলে বাড়ি ফিরে যান তাঁরা।</p> <article> <p style="text-align: justify;">পৌষের পর এবার পঞ্চগড়ের চলছে মাঘের শীতের দাপট। উত্তরের ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। গতকাল শনিবার পঞ্চগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতে দৈনিক আয়নির্ভর মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। সবচেয়ে কষ্টে আছেন নদীর এই বালু ও পাথর শ্রমিকরা।</p> <p style="text-align: justify;">করতোয়ার বালু শ্রমিক অশ্বীনি কুমার রায় বলেন, ‘যেই সময়ে মানুষ গরম কাপড় পরে বাইরে বের হতে ভয় পায়, সেই সময়ে আমরা নদীর জলে নেমে বালু তুলি। নদীর পানি এতটাই ঠাণ্ডা যে নামলেই হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর পর উঠে আগুনে হাত-পা সেঁকে নিই। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ না থাকায় আমাদের এভাবেই কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।’</p> <p style="text-align: justify;">শরিফুল ইসলাম নামের আরেক বালু শ্রমিক বলেন, ‘এই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে আমরা জীবিকা নির্বাহ করছি। সরকার এখানে হাজার হাজার কম্বল দিয়েছে, শুকনা খাবার দিয়েছে, কিন্তু আমাদের বালু-পাথর শ্রমিকদের ভাগ্যে তা মেলেনি। সরকারি সহায়তার খবরও আমরা পাই না।’</p> <p style="text-align: justify;">রুস্তম আলী নামের পাথর শ্রমিক বলেন, ‘এলাকায় অন্য কোনো কাজ না থাকায় আমরা নদীর ওপর নির্ভরশীল। তাই শীত যতই হোক না কেন, আমাদের নদীতে না নামলে উপায় নেই। শীতকালে সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়াত তাহলে কিছুদিন হয়তো আমরা এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতাম।’</p> <p style="text-align: justify;">পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা বরাদ্দ পাওয়া শীতবস্ত্র ও শুকনা খাবার ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করেছি। দরিদ্র মানুষ ছাড়াও শ্রমিক, এতিমখানা, প্রতিবন্ধীদের মাঝে তা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাথর বালু-শ্রমিকরা রয়েছেন কি না, তা আমার সঠিক জানা নেই। তবে সামনে আবার বরাদ্দ পেলে পাথর-বালু শ্রমিকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।’</p> </article>