বরিশালের আগৈলঝাড়ায় খ্রিষ্টান ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে এনজিও খুলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রায় দুই হাজার দরিদ্র পরিবার প্রতারণার শিকার হয়েছে।
এনজিওটির পরিচালক পরিচয় দিয়ে চার উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রামে কর্মী নিয়োগ দেন। প্রত্যেক সদস্যকে ২০ হাজার টাকায় আধাপাকা ঘর এবং দুই হাজার টাকা জমা দিলে প্রতি তিন মাস পর পর চাল, ডাল, আটা, চিনি ও তৈল দেওয়ার প্রলোভন দেখান তারা।
এভাবে দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন এনজিওটির পরিচালক সায়মন বিশ্বাস।
এই কাজে খুলনা বিভাগীয় প্রধান মেরী বিশ্বাস, বরিশাল বিভাগীয় প্রধান রির্চাড রায় এলিও ও তার স্ত্রী বিউটি সরকার সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে মানুষের মনে বিশ্বাস অর্জনে মরান্দিরপাড় পিরাতিক গির্জায় সভা করেন তারা। সদস্য কার্ডে যিশু খ্রিস্টের ছবি ব্যবহার এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৯৮৬ লেখা রয়েছে।
প্রতিদিন মাঠকর্মীদের বাড়িতে টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিচ্ছেন সদস্যরা।
মাঠকর্মী ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগধা ইউনিয়নের মরান্দিরপাড় গ্রামের চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর স্বপ্নডানা নামের একটি এনজিওর কার্যক্রম শুরু করেন পরিচালক সায়মন বিশ্বাস, খুলনা বিভাগীয় প্রধান মেরী বিশ্বাস, বরিশাল বিভাগীয় প্রধান রির্চাড রায় এলিও ও তার স্ত্রী বিউটি সরকার। তারা ওই এনজিওর মাঠকর্মী হিসেবে আবেদনপত্র জমা নিলেও নিয়োগ দেননি জন মার্টিন রায়, মিতালী সরকার, রিনা রায়, পিন্টু সমদ্দার, রিনা বৈজ্ঞব, তৃজ্ঞা হুর, নিত্যনন্দা বাড়ৈকে।
তাদের মৌখিক নির্দেশে মরান্দিপাড়, ছবিখারপাড়, আস্কর, জোবারপাড়, স্বরবাড়ি, নাঘিরপাড়, বড়মগরা, বাগধা, বাকাল, কোটালীপাড়া উপজেলার নারকেলবাড়ি, পীরেরপাড়, গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ও উজিরপুর উপজেলার পটিবাড়ি, ইন্দুরকানী, কুড়ালিয়া গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ২২৯ জন সদস্যের কাছ থেকে আধাপাকা ঘর দেওয়ার কথা বলে ২০ হাজার টাকা এবং চাল, ডাল, আটা, চিনি ও তেল দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ১৫৩২ জন সদস্যের কাছ থেকে ২০৪০ টাকা করে উত্তোলন করেন মাঠকর্মীরা।
মাঠকর্মীদের উত্তোলন করা প্রায় কোটি টাকা মাঠকর্মী রিনা রায় ও তার ছেলে ম্যাথিউ রায় বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে সায়মন বিশ্বাসের কাছে পাঠান। সদস্যদের মাঝে নভেম্বর মাসের শেষে দিকে ঘর ও খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার কথা থাকলেও এনজিওর কথিত পরিচালক সরেজমিন না আসায় মাঠকর্মীদের সন্দেহ হয়। বারবার যোগাযোগ করার পর পরিচালক মাঠকর্মীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
এনজিও সদস্য জোবারপাড় গ্রামের অতুল বালার স্ত্রী গোলাপী বালা জানান, 'ঘর বাবদ ২০ হাজার ও খাদ্য সামগ্রী বাবদ দুই হাজার ৪০ টাকা এনজিওর মাঠকর্মী মিতালী সরকারের কাছে দিয়েছি।'
কুড়ালিয়া গ্রামের সন্টু বাড়ৈর স্ত্রী আলোমতি বাড়ৈ ও জেবারপাড় গ্রামের সুশান্ত বালার স্ত্রী সঞ্জিতা বালার কাছ থেকেও ঘর ও খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার কথা বলে মাঠকর্মীরা টাকা নিয়েছেন।
মাঠকর্মী রিনা রায় বলেন, 'মেরী বিশ্বাস, রির্চাড রায় এলিও ও তার স্ত্রী বিউটি সরকার আগৈলঝাড়ায় এসে খ্রিষ্টানদের গির্জায় সভা করেন। স্বপ্নডানা নামে এনজিওর কার্ডে যিশু খ্রিস্টের ছবিসহ রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৯৮৬ সদস্য কার্ড দেখিয়ে ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে প্রতারণা করেন তারা। আমাকে মৌখিকভাবে কর্মী হিসেবে নির্দেশ দিলে আমি ২৫০ জন সদস্যদের কাছ থেকে ১৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা তুলে সায়মন বিশ্বাসের বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে পাঠিয়েছি।'
মাঠকর্মী জন রায় জানান, '৪৯৮ জন সদস্যের কাছ থেকে ২৫ লাখ দুই হাজার টাকা তুলে সায়মন বিশ্বাসের বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে পাঠিয়েছি।'
মাঠকর্মী নিত্যনন্দা বাড়ৈ সাংবাদিকদের বলেন, '১১৪ জন সদস্যের কাছ থেকে উত্তোলন করা টাকা মেরী বিশ্বাসের নির্দেশে এনজিওর পরিচালক সায়মন বিশ্বাসের কাছে তিনটি বিকাশ নম্বরের পাঠিয়েছি।'
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা বলেন, এনজিওটি কোনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। যে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ওই নম্বরটি ভুয়া। উত্তোলন করা টাকা মাঠকর্মীদের ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভুয়া এনজিও স্বপ্নডানার খুলনা বিভাগীয় প্রধান মেরী বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি না বুঝে খুলনার দায়িত্ব নিয়ে ৪০০ সদস্যের কাছ থেকে টাকা তুলে এনজিওর পরিচালক সায়মন বিশাসকে দিয়ে আমি নিজেও প্রতারণার শিকার হয়েছি।'
এনজিওর পরিচালক সায়মন বিশ্বাসের নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।