<p>বাংলাদেশ ভূমিকম্প সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেছেন, অচিরেই বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় শর্টটাইম এবং লংটাইম রোডম্যাপ করা জরুরি।</p> <p>আজ শনিবার ঢাকার এফডিসিতে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে করণীয় নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।</p> <p>মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘গত ২০-২৫ বছরে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলায় সচেতনতা তৈরিতে প্রচুর অর্থ খরচ করা হলেও প্রস্তুতিতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গলদ আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই এ ক্ষেত্রে বড় বাধা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সবাই আমলা। সেখানে কোনো ইঞ্জিনিয়ার বা জিওলজিস্ট নেই। আমলারা দক্ষ জনবলের কথা আমলে নেন না।’</p> <p>রাজউকে এখনো অনিয়ম রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে দুর্নীতি হচ্ছে, টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বিগত সময়ে যে দুর্নীতি হয়েছে আজ তা সংশোধন করা কঠিন। ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেমের (ইসিপিএস) মাধ্যমে রাজউকের নকশার অনুমোদন শুরু করা ইতিবাচক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এখনো স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। ঢাকা শহরে ২১ লাখ ভবনের মধ্যে অকুপেন্সি সনদ প্রদান করা হয়েছে মাত্র ৭০-৮০টি। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারলেও ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে।’</p> <p>সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নগরের ৬৫ শতাংশ ভবনই দুর্বল মাটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। যা ভবন নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্যতম কারণ। ভবন নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। রাজউক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না, তা নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজউক থেকে নকশার অনুমোদন পেতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। নির্মাণ শেষে বিল্ডিংয়ের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট পেতেও বেশ কষ্ট হয়। এমনকি নকশা অনুমোদন ও বিল্ডিং কোড মেনে বিল্ডিং করাতে রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।</p> <p>তিনি বলেন, ভবন নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে ভবন মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। শুধু ঢাকা শহর নয়, দেশের সব জায়গায় ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যতক্ষণ পর্যন্ত ভবন নির্মাণের সাথে জড়িত নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৈতিকতার সাথে দায়িত্ব পালন না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।</p> <p>কিরণ বলেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকেই। ভবন মালিকের ক্যাপাসিটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় আর্ম ফোর্সেস ডিভিশন, ফায়ার সার্ভিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা শহরে অপরিকল্পিতভাবে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন নেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্প হলে তা অগ্নিকূপে পরিণত হতে পারে। বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্পে মৃত্যু হতে পারে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের। ভূমিকম্পে ৯০ শতাংশ মানুষই মারা যায় ভবনধসে। নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় ভরাট করে যেভাবে ঢাকা শহরের আশপাশে হাউজিং গড়ে উঠেছে তাতে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে মাটি গলে পানিতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে আছে, কোনো রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৪ জন মানুষ প্রাণ হারায়। তখন মাত্র একটি বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তূপ সরাতে যেখানে এক মাসেরও বেশি সময় লেগেছিল, সেখানে আমাদের দেশে বড় একটি ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হলে ধ্বংসস্তূপ সরাতে কত দিন লাগবে সেটা আল্লাহ মা’বুদ ছাড়া কেউ জানে না।’</p> <p>অনুষ্ঠানে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা ও ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীলতা নির্দেশিকা মানতে বাধ্য করাসহ ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় ১০টি সুপারিশ করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।</p> <p>‘ভবন মালিকদের দায়িত্বশীলতাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।</p> <p>প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক শাহরিয়ার অনির্বাণ ও স্থপতি সাবরিনা ইয়াসমিন মিলি। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।</p>