<p style="text-align: justify;">শীতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে খেজুর গাছের। শীতকালে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরগাছ থেকে পাওয়া যায় সুমিষ্ট রস ও গুড়। ফল হিসেবেও খেজুরের জুড়ি নেই। শীতের মিষ্টি রোদে খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি খেতে সকলে পছন্দ করলেও বর্তমানে খেজুর গাছের তেমন কদর নেই। উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীর বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে কিংবা রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কিছু সংখ্যক গাছ। কোথাও ইটভাটার উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই গাছ। আগের মতো দা-কাঁচি, একগাছি রশি, একদণ্ড বাঁশ ও কোমরে ঝোলানো লম্বা-গোল আকৃতির বিশেষ পাত্র (ঠুঙ্গি) নিয়ে গাছে উঠতে দেখা যায় না গাছিদের। শীতের সকালে কাঁধে ভার চেপে ঝুলন্ত কলস নিয়ে ছেঁড়া স্যান্ডেলে তাঁদের ছুটতে দেখা যায় না।</p> <p style="text-align: justify;">বেতাগীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে কয়েক বছর আগেও হেমন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গাছ কাটার প্রাথমিক কাজগুলো করার হিড়িক পড়ত। গায়ের পথে-ঘাটে, নদী বা পুকুরপাড়ে, বড় রাস্তার দুই ধারে বা খেতের আলঘেঁষে শত শত গাছের শীর্ষভাগ বিশেষভাবে কাটতেন গাছিরা। ১৫-১৬টি পাতা রেখে গাছের উপরিভাগের বাকলসহ অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিষ্কার করতেন। আড়াআড়িভাবে বাঁধা বাঁশের দণ্ডে দাঁড়িয়ে কোমরে ও গাছে রশি পেঁচিয়ে ধারালো দা দিয়ে গাছিদের গাছ চাঁছা বা কাটার দারুণ দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না।</p> <p style="text-align: justify;">দুর্লভ এ ধরনের দৃশ্য বর্তমানে কেবল বইয়ের পাতায়ই শোভা পাচ্ছে। খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে দেখা যায় না মা-চাচিদের রসের বা ভাপা-পুলিপিঠা বানাতে। এক সময় বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় জেলা বরগুনার খেজুর রসের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল। দেশের অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক খেজুরগাছ। হারানো এ ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। গাছিদের গাছ কাটার সরঞ্জাম, পোশাক, প্রণোদনা ইত্যাদি প্রদান করার মাধ্যমে তাঁদের এ কাজে উৎসাহিত করতে হবে, ব্যবস্থা করতে হবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের।</p> <p style="text-align: justify;">বেতাগী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াপদা রোডের পাশে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করতে আসা শুক্রবার সকালে কথা হয় ষাটোর্ধ রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘দুই যুগ আগেও শীতের এই মৌসুমে ৫০-৬০টি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হত। এ বছর রস সংগ্রহের জন্য ৭টি গাছ প্রস্তুত করা হয়েছে।’</p> <p style="text-align: justify;">পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে কৃষকদেরও। তাঁদের উচিত হবে গাছিদের মজুরি বাড়িয়ে দেওয়া। খেজুরগাছ থেকে উৎপাদিত রস ও গুড়ের উপযুক্ত মূল্য দিতে হবে। বন বিভাগ স্বল্প ব্যয়ে রাস্তার পাশে বা ডিভাইডারে বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাজার হাজার খেজুরগাছ রোপণ করতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণ এবং রস আহরণের জন্য স্থায়ীভাবে গাছি নিয়োগ দিতে পারে তারা। এতে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং সুযোগ সৃষ্টি হবে অনেক দরিদ্র গাছির কর্মসংস্থানের।’</p>