<p>নানা গুঞ্জনের পর অবশেষে ঝালকাঠি-১ আসনে (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর (বীর-উত্তম)। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। </p> <p>এছাড়া ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর নিজেই ঢাকার কারওয়ান বাজারে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের বিষয়টি জানিয়েছেন। এ সময় তিনি বিএনপির সকল পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ আসনে বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন। তিনি এ আসন থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয় শাহজাহান ওমরকে।</p> <p>আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষরিত জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জানা যায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও ১৯৭২) এর আর্টিকেল-১৬(২) ও ১৬ (৩) অনুযায়ী প্রদত্ব ক্ষমতাবলে জাতীয় সংসদ নির্বাচী এলাকা ১২৫ ঝালকাঠি-১ এলাকায় শাহজাহান ওমরকে চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। অতএব মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ প্রদান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। </p> <p>শাহজাহান ওমরের বিস্বস্ত এক আইনজীবী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে তিনি নৌকার মনোনয়ন চূড়ান্ত করে চিঠি নিয়ে অনলাইনে মনোনয়নপত্র কিনে পূরণ করে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেন। </p> <p>এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে ওমরকে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়। শাহজাহান ওমর নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজাপুর উপজেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে তাঁর ছবি ও সকল পোস্টার ও ফেসটুন সরিয়ে ফেলা হয়। </p> <p>এর আগে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় রাজধানীর নিউ মার্কেট থানার মামলায় বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরের জামিন হয়েছে। বুধবার শাহজাহান ওমরের জামিন দেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সাল আতিক বিন কাদের। পরে সন্ধ্যায় কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তিপান তিনি। কারাগার থেকে বের হয়ে ঢাকার বাসায় যান শাহজাহান ওমর। এদিকে শাহজাহান ওমরের মুক্তির পরপরই গুঞ্জন ওঠে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনেও নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়। </p> <p>শাহজাহান ওমরের বিস্বস্ত এক আইনজীবী কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই তা দেখবে।</p> <p>উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশের দিন সংঘর্ষের পর ডজন তিনেক মামলা করে পুলিশ। তারপর দলটির আরো অনেক নেতকর্মীর পাশাপাশি শাহজাহান ওমরকেও গ্রেপ্তার করা হয় গত ৪ নভেম্বর ভোরে। পরে তাকে নিউ মার্কেট থানার বাস পোড়ানোর মামলায় চার দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। বিএনপির অবরোধের মধ্যে গত ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় মিরপুর সুপার লিংক লিমিটেডের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় বাসচালক বাদী হয়ে নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেন। রিমান্ড শেষে শাহজাহান ওমরকে গত ৯ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।</p> <p>জানা যায়, এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ এবং ২০০১ সালে অস্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের কোন প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল না। এ চারটি নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের সাবসেক্টর কমান্ডার শাহজাহান ওমরের প্রাপ্ত ভোটের সাথে পরাজিত প্রার্থীর ভোটের বিস্তর ব্যবধান ছিল। দলীয় নেতা কর্মীর বাইরেও শাহজাহান ওমরের রয়েছে ব্যাক্তিগত বিশাল কর্মী বাহিনী। <br /> দুই ধরনের কর্মীরাই তাকে ওস্তাদ বলে সম্ভোধন করেন। ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থাকালীন প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাকে দেশ ছাড়তে হয়। সে কারণে ২০০৮ সালের নবব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। আর ২০১৪ সালে বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বয়কট করায় তিনি প্রার্থী হননি। </p> <p>এদিকে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান উমর নৌকার মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করায় ঝালকাঠি জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। দলের সঙ্গে বেইমানি করে তিনি প্রহসনের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন বলেও জানান তাঁরা। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বাক্ষরিত চিঠিতে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনের খবর নিশ্চিত হওয়ায় জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ তাঁর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। </p> <p>এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দলের শত্রু আজ চিহ্নিত হয়েছে। দলের সঙ্গে বেইমানি করায় নেতাকর্মীরা শাহজাহান ওমরের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছে। তিনি কখনোই বিএনপিকে এবং নেতাকর্মীদেরকে ভালোবাসেননি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে দলের মধ্যে অজনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি দল থেকে চলে যাওয়ায় নেতাকর্মীরা স্বস্তিতে আছে।</p> <p>জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য (দপ্তরের দায়িত্ব থাকা) অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান মুবিন বলেন, দলের নেতাকর্মীদের আবেগ অনুভূতিতে আঘাত করেছেন শাহজাহান ওমর। ১৫ বছর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে লড়াই সংগ্রামে দমন-পীড়নকারীদের পাশ কাটিয়ে নৌকার মাঝি হওয়ায় সকল শ্রদ্ধা সম্মান বিসর্জন দিয়েছেন তিনি। ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ঝালকাঠি জেলা বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি আজ জঞ্জাল মুক্ত হয়েছে। <br /> শাহজাহান ওমর দলের জন্য কখনোই কাজ করেননি। তিনি দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে রাখতেন। ব্যক্তি সুবিধা পেতেই তিনি দলে ছিলেন। দলের মন্ত্রী এমপি থাকাকালীন সময় দলের পদ পদবী ব্যবহার করে নানা ফায়দা লুটেছেন। সবসময় দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন তিনি। সে নৌকার মাঝি হওয়ায় ঝালকাঠিবাসী তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে। ইতিমধ্যে তাকে দল থেকে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।</p> <p>রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়া হায়দার খান লিটন বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে দলের মনোনয়ন দিয়েছেন, তাকে নিয়েই মাঠে থাকব। আমি মনে করি দলের সকল নেতাকর্মীরাই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।</p>