<p>আগুনে পুড়ে ঘরগুলোর শেষ চিহ্নটুকুও আর নেই। যেখানটায় ঘর ছিল তার ভিটার ওপর শুধু ছাই। এক কোনায় পড়ে আছে আধাপোড়া চাল। রয়েছে গৃহস্থালির নানা কিছু। এর পাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দশ, বিশ, এক শ, পাঁচ শ ও হাজার টাকার বেশ কয়েকটি ঝলসানো নোট। অনেকগুলো নোট পুড়ে ছাই। পাশের একটি গোয়ালঘরে চার ভাই মিলে লালন-পালন করতেন দেশি-বিদেশি জাতের গরু। সেখানের ২০টি গরু হতাহত হয়েছে। </p> <p>নিজেদের পোড়া ঘরের মধ্যে নির্বাক বসে আছেন চার ভাই সালাম (৫৪), শহীদ (৫৫), হেলাল (৪৮)ও গিয়াস উদ্দিন (৬৫) ও তাদের পরিবার। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে পুড়ে গেছে তাদের সংসার। বৃদ্ধ মা ছাড়া ছোট শিশুদের নিয়ে থাকতেন তারা। এখন কোথায় যাবেন, কী খাবেন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না।</p> <p>খবর পেয়ে শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচর নওপাড়া গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। আগুনে পুড়ে গেছে চার ভাইয়ের বসতঘর। একই সঙ্গে মারা গেছে লালন-পালন করা ২০টি গরুর মধ্যে ৯টি বিভিন্ন জাতের গরু। বাকিগুলোর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। </p> <p>হেলাল মিয়া জানান, সারা দিন কাজকর্ম করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ রাত ১২টার দিকে পোড়া গন্ধ পেয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন, পাশের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনের ঘরের একপাশে আগুন জ্বলছে। আর তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বাকি ঘরগুলোতে। তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলে লোকজন ছুটে আসেন। ততক্ষণে আগুনে চারটি বসতঘর পুড়ে যায়। সেই সাথে পাশেই একটি গোয়ালঘরে ছিল চার ভাইয়ের যৌথ উদ্যোগে লালন-পালন করা ২০টি গরু। তাদের পরিবার গরুগুলোর ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় গোয়ালঘরে আগুন লেগে গেলে আগুন নেভানোর আগেই সব গরুই দগ্ধ হয়। এর মধ্যে ৯টি গরু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বাকিগুলোর অবস্থা ভালো নয়। </p> <p>ক্ষতিগ্রস্ত আরেক ভাই মো. শহীদ মিয়া জানান, ধারদেনা করে পুঁজি  নিয়ে গরু কিনে তা লালন-পালন করে বাজারে বিক্রি করেন। আর তার লভ্যাংশ ভাইয়েরা ভাগ করে নেন। এভাবেই চলছে গত প্রায় ১০  বছর ধরে। বিদেশি জাতের গরু ছাড়া রয়েছে দেশি জাতের। একটি গরুর সর্বোচ্চ মূল্য রয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। তার মধ্যে অনেক গাভী গরু থেকে দুধ বিক্রি করা হতো। এখন সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। </p> <p>তিনি আরো বলেন, গত বুধবার একটি গরু বিক্রি করেন ৬০ হাজার টাকায়। সেই টাকা তার কাছেই রক্ষিত ছিল। আর কিছু টাকা যোগ করে আরেকটি গরু কেনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নগদ টাকাগুলোও পুড়ে গেছে। </p> <p>জানা যায়, চার ভাইয়ের পরিবারের মোট সদস্যসংখ্যা প্রায় ৩০ জন। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে তারা।</p> <p>ক্ষতিগ্রস্ত সালামের স্ত্রী ফরিদা বেগম জানান, গত প্রায় ২০ বছর ধরে তিল তিল করে জমানো তার সব সঞ্চয় আর গৃহস্থালি পণ্য এক রাতের আগুনে মাত্র আধা ঘণ্টায় পুড়ে গেছে। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে সব শেষ অইতাছে, কিন্তুক কিচ্ছু করতাম পারছি না। খালি নিজের জান ও পোলাপাইনডি লইয়া বাইর অইছি।’</p> <p>বৈদ্যুতিক মিটার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম সেখানে গেলেও ততক্ষণে সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রক্ষা করা যায়নি কিছুই।</p> <p>এ ব্যাপারের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা হাফিজা জেসমিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। </p>