<p>অটিস্টিক, বুদ্ধি, সেরিব্রাল পালসি (সিপি) ও ডাউন্সজাতীয় প্রতিবন্ধী বা এনডিডি শিশুদের নিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বৃহস্পতিবার (৮ জুন) ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ চত্বরে। দেশের সাত বিভাগের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দেড় শ প্রতিবন্ধী শিশু এতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী শিশু পাঠশালা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী দুই শিশুও পুরস্কার জিতেছে।</p> <p>ছেলেদের দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে বাজিতপুরের পিরিজপুর ইউনিয়নের জামতলী গ্রামের প্রয়াত সেলিম মিয়ার ছেলে মো. সায়মন মিয়া (১৩)। এছাড়া মেয়েদের দৌড় প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছে একই ইউনিয়নের উত্তর জফরপুর গ্রামের সিন্দু মিয়ার মেয়ে মার্জিয়া আক্তার (১৪)। প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী শিশু পাঠশালা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাতজনের এনডিডি শিশুর একটি দল অংশগ্রহণ করে। </p> <p>পুরস্কার পেয়ে খুব খুশি সায়মন। গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। জন্মের পরপরই বাবাকে হারায় সে। সায়মন বলল, ‘আমি দৌড় দিছি। ফাস্ট হইছি’। এ সময় বারবার সে পুরস্কার হিসাবে পাওয়া মেডেল হাতে নিয়ে দেখাচ্ছিল। সায়মনের মা শাহীনূর বেগম জানান, ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরেই তাঁর ছেলে সবাইকে মেডেল দেখিয়ে বলছিল, ‘আমি পাইছি’। জীবনে প্রথমবার কোনো প্রতিযোগিতায় গেছে সায়মন। এ কথা জানাতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে শাহীনূরের। এমন একটি ধন্যবাদ জানান মৃত্তিকা কর্তৃপক্ষকে।</p> <p><img alt="পুরস্কার" height="386" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Harun/June-2023/09-06-2023/disabled child-01_kalerkantho_pic.jpg" width="640" /></p> <p>যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া পরিদপ্তর ‘এনডিডি শিশুদের (অটিস্টিক, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসি (সিপি) ও ডাউন্স শিশু) জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩’ নামে প্রথমবারের মতো এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদান ও পুরস্কার বিতরণে অংশ নেন ক্রীড়া পরিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মুহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী, প্রতিবন্ধিতা বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অজন্তা রাণী সাহা, বিশেষায়িত শিশুদের খেলাধুলা বিশেষজ্ঞ ড. মারুফ আহমেদ মৃদুল।</p> <p>ক্রীড়া পরিদপ্তর সূত্র জানায়, খুলনা বাদে বাকি সাত বিভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের দেড় শ প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় ছয়টি ইভেন্টে ছিল ৫০ ও ১০০ মিটার দৌড়, বল নিক্ষেপ, দ্রুত হাঁটা, ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস। মোহাম্মদপুর সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় দৌড়, বল নিক্ষেপ, দ্রুত হাঁটা। এছাড়া ইনডোরে হয় ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস। প্রতিযোগিতায় সারাদেশের প্রায় ৫০ জন কোচ ও ১০০ জন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>১৫টি বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী শিশু পাঠশালা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ঢাকার প্রয়াস, পারমিতা, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, সোয়াক, অটিজম কেয়ার ফাউন্ডেশন স্পেশাল স্কুল, কেরানীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঝালকাঠির ভান্ডারিয়া, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারীর কালিকাপুর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক স্কুল, মৌলভীবাজার ব্লুমিং রোজেস স্পেশাল স্কুল, নাটোর ছায়া প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক স্কুল ও গাইবান্ধা অটিস্টিক স্কুল।</p> <p>মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী শিশু পাঠশালা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সভাপতি ও বাজিতপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আ কা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধী শিশুরাও অনেক কিছু করতে পারে। এ বিষয়টি আবার প্রমাণ করল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ও পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুরা। আমি বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিকভাবেও বিশেষ শিশুরা একদিন এদেশের জন্য খ্যাতি বয়ে নিয়ে আসবে।’  </p>