<p>কুমিল্লার দেবীদ্বারে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এক তরুণী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। অভিযুক্ত ও মাতব্বরদের চাপের মুখে থানা বা আদালতে অভিযোগ করতে পারছে না ভুক্তভোগীর পরিবার। বাধ্য হয়ে মীমাংসা করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।</p> <p>ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার (২৬ মার্চ) দেবীদ্বার পৌর এলাকার বিনাইপাড় গ্রামে। স্থানীয়রা জানায়, বিনাইপাড় গ্রামের লিলু মিয়ার (৬৫) কন্যা পিংকি আক্তার (২২)। সন্ধ্যায় প্রতিবেশী খালার বাড়ি থেকে বাড়ি ফেরার পথে হাসান (৩২), জসীম উদ্দিন (৩৫), রুবেল মিয়া (৩০) তার মুখ চেপে ধরে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ঘটনার পরদিন (২৭ মার্চ) ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযুক্ত তিনজনকে ডেকে আনে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে অভিযুক্ত হাসান পিংকিকে বিয়ে করতে রাজি হয়। কিন্তু শর্ত জুড়ে দেয়, পিংকিকে বিয়ে করলেও, তাকে ঘরে তুলতে পারবে না। এতে রাগে ও অপমানে ওই দিন সন্ধ্যায়ই তিনি আত্মহত্যা করেন।</p> <p>ভুক্তভোগীর মা বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে বরপক্ষের লোকজন দেখতে আসছিল। তাই আমার বড় বোন তার বাড়িতে যেতে বলেন। আমার বাড়ি থেকে বোনের বাড়ির দূরত্ব মাঝখানে একটি পুকুর। গত রবিবার (২৬ মার্চ) রাত ৮টায় বোনের বাড়িতে গিয়ে শুনি বরপক্ষের লোকজন অপেক্ষা করে চলে গেছে। পরে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় মেয়ে জানায় তার হাতে থাকা ২০০ টাকা কোথায় যেন পড়ে গেছে। পরে মেয়ে আমাকে বলে, ‘মা তুমি বাড়ি যাও, আমি টাকাটা খুঁজে দেখি পাই কি না।’ বাড়িতে আসার পর কয়েকজন মহিলা এসে আমাকে বলেন, পিংকিকে তিনজন ছেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে ফজলু মিয়ার বাড়ির পাশে একটি নির্জন জায়গা থেকে অন্য লোকজনের সহায়তায় মেয়েকে উদ্ধার করে ঘরে আনি। মেয়ে ঘরে এসে আমাকে বলে, ‘ওই বাড়ির আব্দুল কাদেরের ছেলে হাসান, মুকবল হোসেনের ছেলে জসীম উদ্দিন ও রাজা মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া তাকে ধর্ষণ করে। তারা পিংকির গায়ের ওড়না এবং একটি অ্যানড্রয়েড মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়।’’ </p> <p>দেবীদ্বার পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের জানান, পিংকির আত্মহত্যার পর অভিযুক্তদের বাঁচাতে সালিস করে ঘটনার মীমাংসা করা হয়! গণধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সালিসে তাদের কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।</p> <p>আবু তাহেরের সঞ্চালনায় সালিসে উপস্থিত অন্য মাতব্বররা হলেন শাহজাহান মেম্বার, গোলাম মোস্তফা, রেনু মাস্টার, রফিক মিয়া, তাজেল মিয়া, ইব্রাহীম মিয়া প্রমুখ। আবু তাহের বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় সিলেট ছিলাম। বাড়ি এসে ওই ঘটনা সম্পর্কে অবগত হই। হাসান, জসীম, রুবেল সালিসে পিংকিকে ধর্ষণ করার দায় স্বীকার করেছে। নিহত পিংকি স্বামী পরিত্যক্তা ছিল, তার চার বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।’</p> <p>দেবীদ্বার পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মো. সফিকুল ইসলাম জানান, শাহজাহান ফিশিং নেট ইন্ডাস্ট্রির মালিক শাহজাহান মেম্বারের ভাগ্নে হাসানকে রক্ষা করতে ভুক্তভোগীর পরিবারকে থানা পুলিশের আশ্রয় নিতে দেয়নি। গোটা পরিবারই প্রভাবশালীদের হাতে জিম্মি। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। এ ছাড়া পিংকি, হাসান, জসীম, রুবেল শাহজাহান নেট ফিশিং ইন্ডাস্ট্রির শ্রমিক ও কর্মচারী। </p> <p>শাহজাহান ফিশিং নেট ইন্ডাস্ট্রির মালিক মো. শাহজাহান মেম্বার বলেন, ‘আমি ঘটনার বিষয়ে অবগত হলেও সালিসের দিন উপস্থিত ছিলাম না। অভিযুক্তদের দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত দিইনি। যা করেছে আমার ছোট ভাই আবু তাহের, আবুল কালাম, মোস্তফাসহ অন্যরা। অভিযুক্ত হাসান আমার ভাগিনা, জসীম, রুবেল আমার প্রতিবেশী।  ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা আমার কারখানায় চাকরি করত। ঘটনার পর থেকে তারা কেউ কারখানায় আসে না।’</p> <p>দেবীদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর জানান, ‘গণধর্ষণের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এলাকার লোকজনও ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করতে চেয়েছিল। আত্মহত্যার বিষয়টি আমার সন্দেহ হওয়ায় ময়নাতদন্ত করেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে চাইলে মামলা নেব।’</p>