<p>দীর্ঘ চার বছর ২ মাসের বেশি সময় পর কুমিল্লার আলোচিত এই ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে কুমিল্লার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার্জশিটে চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় মোট ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের শামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় সন্ত্রাসীরা মোটর সাইকেলে করে এসে কুমিল্লার ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনকে মাথায় গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে।</p> <p>বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পিবিআই, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান আদালতে চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলাটির সবশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পিবিআইয়ের কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক এম এ মঞ্জুর।    </p> <p>দেলোয়ার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে ছিলেন। এছাড়া নগরীর হাউজিং এলাকার একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন তিনি। আদালতে দেওয়া চার্জশিটে এই খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের টানা দুইবারের কাউন্সিলর মো.আবদুস সাত্তারের কথা বলা হয়েছে। সাত্তার কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন।</p> <p>এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিবিআই, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান বলেন, আলোচিত এই মামলাটি ছিলো আমাদের জন্য চালেঞ্জিং। দীর্ঘ গভীর তদন্তে সকল রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। আমাদের হাতে পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। দীর্ঘ তদন্তের পর কিলিং মিশন বাস্তবায়নকারী এবং নেপথ্যে থাকা পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকান্ডে সহযোগিদের আমরা চিহ্নিত করে চার্জশিট দিতে পেরেছি, এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি। এখন খুনে জড়িতদের বিচারের বিষয়টি আদালত দেখবেন।</p> <p>পিবিআই কার্যালয় ও নিহতের পরিবাবের সদস্যরা জানায়, ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর নির্বাচনী সভার কথা বলে কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার মোবাইল ফোনে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ারকে। সভা শেষে সাত্তারের অফিস থেকে ফেরার পথে ওইদিন রাতে নিজ বাড়ির কাছাকাছি শামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় দেলোয়ারকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন নিহতের বড় ভাই মো.শাহাদাত হোসেন নয়ন বাদী হয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ‘কিলার রেজাউল’ হিসেবে পরিচিত একই এলাকার আবদুর রাজ্জাকের পুত্র পুলিশের তালিকাভুক্ত কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী রেজাউল করিম ও তাঁর সহযোগী কাউছারসহ অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়। সবশেষ ২০২১ সালের ১৮ জুন কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলি, মাদকসহ রেজাউলকে আটক করে বিজিবির সদস্যরা। বর্তমানে রেজাউল কুমিল্লা কারাগারে রয়েছেন। </p> <p>বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই, কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক এম এ মঞ্জুর জানান, আলোচিত এই হত্যাকান্ডে এখন পর্যন্ত কাউন্সিলর সাত্তারসহ ৬জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রধান আসামি রেজাউল ছাড়া বাকিরা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। এলাকায় প্রভাব বিস্তার, কাউন্সিলর নির্বাচনসহ রাজনৈতিক বিরোধে দেলোয়ারকে খুনের পরিকল্পনা করেন কাউন্সিলর সাত্তার। </p> <p>পুলিশ পরিদর্শক এম এ মঞ্জুর আরো জানান, সাত্তার পরিকল্পনাকারী। এছড়া চার্জশিটে নাম থাকা বাকি ১৫ জনের মধ্যে প্রধান আসামি রেজাউল আর শামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকার আতিকুল ইসলাম আতিক ছিলো খুনের বাস্তবায়নকারী। আতিক ছিলো ওই বাইকের চালক। চার্জশিটে অভিযুক্ত বাকি ১৩ জন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরা সকলেই কাউন্সিলর সাত্তার ও রেজাউলের সযযোগী। </p> <p>বৃহস্পতিবার রাতে হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো.আবদুস সাত্তার বলেন, দেলোয়ার ভাই আমার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে আমি রাজনীতি শিখেছি। হত্যা মামলার এজাহারে আমার নাম ছিলো না। মূলত দেলোয়ার ভাইয়ের কাছের লোকেরাই এ ঘটনায় জড়িত। আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আশা করছি আদালতে আমি ন্যায় বিচার পেয়ে নির্দোষ প্রমাণিত হবো।</p>