<p>লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার করেছেন প্রেমিক তিলক চন্দ্র শুভ (২৩)। শুধু তাই নয়, ওই শিক্ষার্থীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করে শাঁখা ও সিঁদুর পরানো হয়েছে।</p> <p>এদিকে ওই ছাত্রীকে ভারতে পাচারে হাতীবান্ধা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুকুমার রায় সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কলেজছাত্রীর পরিবারের লোকজন। </p> <p>বুধবার (১০ আগস্ট) ওই ছাত্রীর দেশে ফেরার কান্না জড়িত আকুতির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিও ভাইরালের পর পরই বাড়ি থেকে সটকে পড়েন তিলকের পরিবারের লোকজন। <br /> ভারতে পাচার হওয়া ছাত্রীর বাড়ি হাতীবান্ধা উপজেলায়। আর ওই যুবক তিলক চন্দ্র শুভ একই উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাদিয়াটারী এলাকার ধনঞ্জয়ের ছেলে। </p> <p>ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কলেজছাত্রী নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুসলিম পরিচয়ে বিয়ে করেন তিলক। এরপর ভারতে পাচার করেন। এমনকি আমাকে শাঁখা, সিঁদুর পরতে বাধ্য করেন। এরপর চলে অমানবিক নির্যাতন। আমাকে ভারতের শিলিগুঁড়ি এলাকার ঘোড়ার মোড়ে একটি বাসায় আটকে রেখেছে। আমাকে উদ্ধার করুন।</p> <p>জানা গেছে, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন ওই কলেজছাত্রী। এ ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে হাতীবান্ধা থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন ছাত্রীর বড় ভাই।</p> <p>ওই মামলার আসামিরা হলেন, তিলক চন্দ্র শুভ, তার বাবা ধনঞ্জয় (৫০), মামা গোপাল (৩২), বন্ধু হৃদয় ও মনিরুজ্জামান তান্না (১৯)। এদের মধ্যে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। বর্তমান তিনি জামিনে রয়েছেন। </p> <p>ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতীবান্ধা থানার এসআই সুকুমার রায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার না করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিলকের বাবা ধনঞ্জয় ও মামা গোপালের নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আর ছাত্রীকে পাচারে তিলককে সব ধরনের সহযোগিতা করেন তিনি।</p> <p>এদিকে ভারতীয় পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হলে তারা ভুক্তভোগী ছাত্রীকে উদ্ধার ও অভিযুক্ত তিলককে আটক থানায় নিয়ে যায়। তারা সেখানে পুলিশি হেফাজতে আছেন। </p> <p>বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের পড়ার টেবিলের পাশে বসে ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছেন মা। আর আর্তনাদ করে বলছেন, সাত মাস থেকে মেয়েকে দেখি না। আমার মেয়েকে প্রতারণা করে ভারতে পাচার করেছে। আমি আর কিছু চাই না, আমি আমার মেয়েকে চাই। তোমরা আমার মেয়েকে আনি দাও। এ কথা বলেই ডুকরে কেঁদে উঠেন তিনি। </p> <p>এ সময় পাশে থাকা ভাবি বলেন, আমার যখন বিয়ে হয় তখন সে ছোট। তাকে নিজের মেয়ের মতো করে মানুষ করেছি। অনেকদিন হলো তাকে দেখি না৷ বুক ফেটে কান্না আসে। কিন্তু কিছু করতে পারছি না। আপনারা ওকে ফিরিয়ে আনেন। </p> <p>এ সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে বড় বোন বলেন, ও আমাদের আদরের ছোট বোন। আপনাদের কাছে অনুরোধ ওকে ফিরিয়ে আনেন। আর যারা তাকে পাচার করেছে তাদের কঠিন শাস্তি দিন। </p> <p>কলেজছাত্রীর বড় ভাই বলেন, আমার বোনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করা হয়। কিন্তু এসআই সুকুমার আমার বোনকে উদ্ধার না করে উল্টো ওকে পাচারে সহযোগিতা করেছেন। এসআই সুকুমার অভিযুক্ত গোপালের ধর্ম বাবা। আমি তাদের কঠিন বিচার চাই। </p> <p>এদিকে তিলক চন্দ্র বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা কোথায় আছেন জানেন না। তবে লোক মুখে শুনেছেন তিলক একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। সেই মেয়ে এখন ভারতে আছে। সেটাও আমরা ফেসবুকে দেখেছি।</p> <p>এ বিষয়ে ছাত্রীর সহপাঠীরা জানান, তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার করেছে বখাটে তিলক চন্দ্র ওরফে শুভ। অতি দ্রুত তাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হোক। আর বখাটে তিলকের কঠিন শাস্তির দাবি করছি।</p> <p>এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার এসআই সুকুমার রায় বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেইনি। ছেলে-মেয়ে উভয় উভয়কে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। এখানে ছেলের বাবা-মামার কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। তাই তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। </p> <p>এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ওই ছাত্রী ভারতে আইনের আশ্রয়ে আছে। তাঁকে দেশে আনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করছে। তাঁকে দ্রুত দেশে আনা হবে।</p>