চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখাননগরে এক ভবন মালিককে ফাঁসাতে ভাড়াটিয়ার শিশুসন্তান আরাফকে (২) পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় তিন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞাপন
হত্যাকাণ্ডের পর মাত্র দুই বছরের মধ্যেই চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে রায়টিকে বিচারব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করছেন আইনজীবীরা।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মিয়াখাননগরের বাসিন্দা মো. ফরিদ (৩৮), ভবনের দারোয়ান মো. হাসান (২৩) ও তার মা নাজমা বেগম।
নিহত শিশু আরাফ একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মী আবদুল কাইয়ুম ও ফারহানা ইসলামের একমাত্র সন্তান ছিল।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর প্রবীর কুমার ভট্টাচর্য্য বলেন, শিশু আরাফকে হত্যার দায় প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তিন আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আসামিদের ফাঁসির রশিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দিয়েছেন আদালত। তিনি বলেন, এই মামলার চার্জ গঠন করা হয় গত বছরের ১০ মার্চ। রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
শিশু আরাফ হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ১০ মার্চ আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জন ও আসামিপক্ষে ১০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামির উপস্থিতিতে বিচারক মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।
২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে একটি ভবনের ছাদের পানির ট্যাংকে ফেলে শিশু আরাফকে হত্যা করা হয়। ওই দিন বিকেলে ভবনের সামনের পার্কিংয়ের জায়গায় খেলা করছিল আরাফ। তার বাবা-মা ওই ভবনে ভাড়াটিয়া হিসেবে বাস করতেন। খেলাধুলার আগে আরাফ চনাচুর খেয়েছিল। মায়ের কাছে পানি খেতে চেয়েছিল আরাফ। মা বাসার ভেতর থেকে পানি আনার পর দেখেন আরাফ পার্কিংয়ের জায়গায় নেই। পরে আরাফের মরদেহ উদ্ধার হয় পানির ট্যাংক থেকে।
এ ঘটনায় বাকলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, ওই দিন পার্কিংয়ের জায়গায় খেলাধুলায় মগ্ন আরাফকে আদর করার ছলে ছাদে নিয়ে যান আসামি নাজমা বেগম। সেখানে পানির ট্যাংকে ফেলে দেওয়া হয় শিশুটিকে। নাজমা বেগমের জবানবন্দিতে আরো প্রকাশ পায়, তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। তাকে অর্থের লোভ দেখিয়ে পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদ শিশুটিকে হত্যা করতে বলেছিলেন। এর মাধ্যমে ওই ভবনের মালিক ও দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়াকে ফাঁসাতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন ফরিদ। ফরিদের সঙ্গে নুরুল আলমের বিরোধ ছিল। তাই নাজমাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে শিশু আরাফকে হত্যা করানো হয়। এর মাধ্যমে ভবন মালিককে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছিলেন ফরিদ। আর নাজমাকে ওই ভবনে প্রবেশের জন্য গেট খুলে দিয়েছিলেন নাজমার ছেলে ও ভবনের প্রহরী হাসান।
ফরিদের সঙ্গে ভবন মালিক নুরুল আলমের বিরোধের নেপথ্যে ছিল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ফরিদ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন। নির্বাচনকালে নুরুল আলমের প্রচারণার সময় হামলার ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়েছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়েই ফরিদ নুরুল আলমকে ফাঁসাতে এই ঘটনার পরিকল্পনা করেছিলেন।