খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর ও হাসপাতালে ভাঙচুর ঘটনার আসামিদের গ্রেপ্তারে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন চিকিৎসক নেতারা। একই সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন।
বুধবার দুপুরে নগরীর মিলন চত্বরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখার প্রতিবাদ সমাবেশে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। দাবি বাস্তবায়ন না হলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিসহ আরো কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন চিকিৎসকরা।
বিজ্ঞাপন
খুলনা বিএমএর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ, ডা. ধীরাজ মোহন বিশ্বাস, ডা. গাজী মিজানুর রহমান, গাজী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বঙ্গকমল বসু, ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সৈকত ঘোষ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ডা. সুমন রায়।
সমাবেশে চিকিৎসক নেতারা বলেন, খুলনা মেডিক্যালে ৫০০ শয্যার বিপরীতে গড়ে প্রতিদিন ১২০০-১৩০০ রোগী ভর্তি থাকে। দীর্ঘদিনে চিকিৎসকের শূন্যপদগুলো পূরণ হয়নি। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা রোগীদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। বারবার কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক ও রোগীর নিরাপত্তা দাবি করলেও সরকার বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এদিকে শনিবার (৯ এপ্রিল) নগরীর দৌলতপুরের পাবলা কারিকরপাড়ার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা (৫৫) মত্যু ঘটনায় চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করানোর অভিযোগ উঠেছে।
রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রোগী পিয়ারুন্নেছা গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার রাতে ভর্তি হন। তার কিছু জরুরি পরীক্ষা (টেস্ট) করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় প্যাথলজি ও পরীক্ষা বিভাগ বন্ধ থাকায় জরুরি পরীক্ষাগুলো না করানোতে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়। শনিবার রাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সৈকত ঘোষ বলেন, রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসক রোগীর কাছে থাকা অবস্থায় রোগী মারা যান। চিকিৎসকদের কোনো ত্রুটি ছিল না। রোগী মারা যাওয়ার পর রোগীর ছেলেরা চিকিৎসকের রুমের চেয়ার-টেবিল ভেঙে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। চিৎিসকরা ভয়ে টেবিলের নিচে আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পুলিশ হামলাকারীদের মধ্যে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে আটক করে নিয়ে যায়।
চিকিৎসকরা বলেন, ভোর ৬টার দিকে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মৃত নারীর স্বজনদের লাশ বুঝে নেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা তা না করে উল্টো পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে শুরু করে। হামলাকারীদের ছাড়িয়ে নিতে রাস্তা অবরোধ করে। যা নিরপেক্ষ তদন্ত করলেও বেরিয়ে আসবে।
ওদিকে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিজ ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারে দাবি জানান মৃত পিয়ারুন্নেছার স্বামী মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ডাক্তারদের অবহেলায় রাত পৌনে ৩টার দিকে তার স্ত্রী মারা যান। তিনি তার বক্তব্যে ছেলেদের ওপর চিকিৎসক, ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মচারীরা মিলে প্রায় ১৫-২০ জন হামলা চালিয়ে উল্টো পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন।