<p>বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ৩০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ২০০৮ সালে জন্ম নিবন্ধন করে ২২ হাজার জন। এর মধ্যে ২০ হাজার জনের জন্ম সনদেই ভুল রয়েছে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সজল কুমার কীর্তনীয়া। এতে জনসাধারণের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।</p> <p>জানা গেছে, বরগুনার বেতাগীর ৩ নম্বর হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ দেশের প্রথম ডিজিটাল ইউনিয়ন। এ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইন্টারনেটে যে সকল নাগরিকের জন্ম সনদ দেওয়া হয়েছে তাতেই এ ভুল পাওয়া গেছে। এতে ত্রুটিপূর্ণ জন্ম সনদ নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। জন্ম সনদ সংশোধন করতে বিভিন্ন দপ্তরে দিনের পর দিন ধর্না দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।</p> <p>সম্প্রতি বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ও কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরির কাজ চলছে। এক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর তথ্যের সাথে বাবা-মায়ের জন্ম সনদের কপি সংযোজন করার নির্দেশ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এই হোসনাবাদ ইউনিয়নের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ ভুলে ভরা জন্ম সনদ সংশোধন করতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কারো কারো বাবার জন্মসনদ ভুল আবার কারো মায়ের জন্মসনদে ভুল রয়েছে। এসব জন্মসনদে সংশোধন করতে অনলাইন বিধিবিধানের আলোকে ভুক্তভোগীদের আরো পদে পদে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।</p> <p>হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমার, আমার স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলেকে যে জন্ম সনদ দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে ইন্টারনেটের অনলাইনে জন্ম সনদের মিল নেই। আমার সন্তানের বাবা-মায়ের নামের স্থানে 'ঔ' লেখা আসছে। ইন্টারনেট সনদ কপিতে আমার পরিবারের প্রায় সবারই নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য ভুলে ভরা।’</p> <p>ইউনিয়নের দক্ষিন হোসনাবাদ গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী মোসা. মাহিনুর বেগম জানান, ‘আমার মেয়ের জন্ম সনদের অনলাইন ডিজিট ঠিক করতে এসে আমার নজরে আসে, মেয়েসহ আমার ও আমার পরিবারের সবার জন্ম সনদের তথ্য আমার নিজের কাছে থাকা জন্ম সনদের কপির সঙ্গে ইন্টারনেট কপির মিল নেই। আমার মেয়ের জন্ম তারিখ ০১-০১-২০০৬ কিন্তু অনলাইন জন্ম সনদে জন্ম তারিখ ০১-০১-২০০৫ আসছে। আমার নাম আসছে মোসা. শাহিনুর। এখন আমাকে এগুলো ঠিক করতে অনেক জায়গায় দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে।’</p> <p>একই অভিযোগ করেন দক্ষিন হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. জুয়েল  ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, ‘আমার জন্ম সনদের ইন্টারনেট কপির ভুল সংশোধন করার জন্য এক মাস ধরে হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরছি। কিন্তু এক মাসেও সংশোধন করা হয়নি। বরং ভোগান্তিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছি।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘প্রথমে ২০০ টাকা ফি দিয়ে জন্ম সনদের ভুল ইন্টারনেট কপি সংগ্রহ করতে হয়। এর পর ফের ১০০-১৫০ টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে ভুল সংশোধনের আবেদন করতে হয়। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম সনদ সংযুক্ত করে  সেই অবেদন উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর সেই কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছে। ভুল সংশোধনের চুড়ান্ত শুনানির পর আবারও ২০০ টাকা ফি জমা দিয়ে তবেই মেলে সঠিক জন্ম সনদ। এতোগুলো ধাপে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়, তা বর্ণনা করার মতো নয়।’</p> <p>তিনি ক্ষোভের সঙ্গে আরো জানায়, ‘জন্ম সনদে যা কিছু ভুল সবই হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে যারা কাজ করেছেন তাদের। অথচ এখন তা সংশোধন করতে আমাদের দীর্ঘ ভোগান্তির পাশাপাশি প্রতিটি সনদের জন্য বাড়তি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা গুনতে হচ্ছে।’</p> <p>ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মাসুদ মৃধা তাঁর নিজ ফেসবুক আইডির স্টাটাসে ‍লিখেছেন, 'জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা এবং জন্ম তারিখ ব্যতীত পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সংশোধনের পর সনদের কপি বিনা ফিসে সরবরাহের কথাও বলা হয়েছে।'</p> <p>ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি জানান, এই ইউনিয়নে এক একজনের ভুল জন্মসনদ সনদ সংশোধন করতে অনলাইনসহ ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। ব্যক্তি বিশেষ কারো ক্ষেত্রে ১০০০ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে।</p> <p>হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সজল কুমার কীর্তনীয়া বলেন, ‘২০০৮ সালে এ ইউনিয়নের ৩০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করেন ২২ হাজার জন এবং এরমধ্যে ২০ হাজার জনের জন্ম সনদেই ভুল রয়েছে। ২০১২ সালে যারা জন্ম নিবন্ধনের দায়িত্বে ছিলেন, তারা প্রাপ্ত তথ্য নেটে সংযুক্ত করার সময় ভুল করেছেন। তবে বর্তমানে এই ইউনিয়নে অনলাইনে জন্ম সনদের সংখ্যা ২৪,৩৬৩ জন। সমস্যাগুলো অতি শিগগিরই সমাধান হবে।’</p> <p>এ বিষয়  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ‘হোসনাবাদ ইউনিয়নের জন্ম সনদের ইন্টারনেট কপিতে ক্রটির বিষয়টি আমারও নজরে এসেছে। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ নাগরিকদের ভোগান্তি লাঘবে জন্মসনদ সংশোধন সহজীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p>