<p>চাঁদপুরের মতলবে আইসডিডিআিরবির হাসপাতালে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছেই। মৌসুমের এই সময় আবহাওয়া জনিত কারণে কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষজন। শুধু চাঁদপুর নয়, আশপাশের জেলা থেকেও রোগীরা ছুটে আসছেন বিশেষায়িত এই হাসপাতালটিতে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পেয়ে খুশি রোগী ও তাদের স্বজনরা।</p> <p>একদিকে ঋতু পরিবর্তন। অন্যদিকে, আবহাওয়া জনিত কারণ। এতে নানা ধরনের পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাই এই সময় শুধু ডায়রিয়ার রোগী-ই নয়, কলেরায় আক্রান্ত রোগীর চাপও বাড়ছে চাঁদপুরের মতলবে আইসিডিডিআরবির বিশেষায়িত এই হাসপাতালে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন এই হাসপাতালে চাঁদপুরের আশপাশের জেলাগুলো থেকেও রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে ছুটে আসছেন। </p> <p>সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আইসিডিডিআরবির এই হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা গেছে রোগীর ভিড়। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চিকিৎসকসহ নার্সরা। আর কাঙ্খিত সেবা এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পেয়ে খুশি রোগী এবং তাদের স্বজনরা। এদের মধ্যে কুমিল্লার লাকসামের জোৎস্না বেগম (৪২)। গতকাল রাত পৌনে ১০টায় এই হাসপাতালে ভর্তি হন। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ তিনি। একই জেলার দেবিদ্বার উপজেলা থেকে আড়াই মাসের শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শিশু আরিশার মা তাকে নিয়ে এখানে ছুটে আসেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠে। এমন আরো অসংখ্য মানুষ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের ভরসা মতলবে বিশেষায়িত এই হাসপাতাল।</p> <p>এদিকে, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং ভর্তির ধরণ নিয়ে কথা বলেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। বছরের অন্যসময় প্রতিদিন ৬০-৭০ রোগী ভর্তি হলেও এখন সেই সংখ্যা এক শ ছাড়িয়ে গেছে। সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার চন্দ্রশেখর দাস জানান, মুমূর্ষু প্রায় এই রোগীর রগে আট লিটার স্যালাইন এবং মুখে আরো চার লিটার স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। </p> <p>বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক আরো জানান, প্রতিদিন ভর্তি হওয়া মোট রোগীর মধ্যে ১০ শতাংশ হচ্ছে এমন মুমূর্ষু কলেরায় আক্রান্ত। এমন অবস্থায় গত সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি মাসে রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেড়ে চলেছে।</p> <p>অন্যদিকে, মৌসুমের এই সময় পেটের নানা ধরনের পীড়া থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন হাসপাতালের প্রধান, বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসক আল ফজল খান। তিনি জানান, বর্ষার আগে এবং পরে পানিবাহিত রোগে বেশির ভাগ মানুষ আক্রান্ত হন। তবে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় আগেই হাসপাতালে ভর্তির জন্য বলেন তিনি। চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, সার্বিকভাবে জেলার ডায়রিয়া পরিস্থিতি বেশ উন্নত। মতলবের বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাপাতালে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে এই জেলায় ডায়রিয়া কিংবা কলেরায় মৃত্যুর কোনো ঘটনা ঘটেনি।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৬ দশক ধরে আইসিডিডিআরবি-হাসপাতাল, মতলব কেন্দ্রে ৮ লাখ রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার মহাখালী এবং মতলবের এই হাসপাতালে প্রতিবছর দুই লাখ রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন। তবে বিদেশি রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাগুলো এই পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দিয়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল চালু রাখতে সহায়তা করলেও এখন তাদের অনুদান প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অনেকেই এটি রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। </p>