<p>কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রানী সম্পদ বিভাগের ক‍্যাম্পাসে বাণিজ্যিকভিত্তিতে নেপিয়ার পাকচং ঘাসের চাষ করে সাফল‍্য অর্জন করেছে উপজেলা প্রানী সম্পদ বিভাগ। সেই ঘাস এখন হাটে বাজারে স্বল্প মূল‍্য বিক্রি করছেন তারা।</p> <p>প্রানী সম্পদ বিভাগের নিজস্ব ক‍্যাম্পাসে নেপিয়ার পাকচং জাতের ঘাস চাষে সাফল্য দেখে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খামারীরদের মাঝে এই জাতের ঘাস চাষ করার আগ্রহ বাড়ছে।</p> <p>নেপিয়ার পাকচং জাতের চাষ করা ঘাস সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার ভূরুঙ্গামারী হাটে ৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রানী সম্পদ বিভাগ।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নেপিয়ার পাকচং একটি হাইব্রীড, দ্রুত বর্ধনশীল এবং উচ্চ উৎপাদন সম্পন্ন ঘাস। এটি গবাদিপশুর জন্য অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সুস্বাদু ও মিষ্টি প্রকৃতির একটি ঘাস। সাধারণ নেপিয়ার ঘাসে যেখানে মাত্র ৮-১২% ক্রুড প্রোটিন থাকে সেখানে নেপিয়ার পাকচং ঘাসে ১৬-১৮% ক্রুড প্রোটিন পাওয়া যায়। নেপিয়ার পাকচং ঘাসে আছে শুস্ক পদার্থ ২৫% প্রোটিন ১৬% ফ‍্যাট ১% ফাইবার ২৭% ও মোটাবলিক এনার্জি ২ মেগাজুল / কেজি।</p> <p>থাইল‍্যান্ডের পাকচং এলাকার একদল গবেষক আফ্রিকান নেপিয়ার ঘাসের সাথে মুক্তা বাজরা ঘাসের টিস‍্যূ কালচার করে এই বিশেষ উচ্চ ফলনশীল জাতের ঘাস উদ্ভাবন করেন। এ জন‍্য থাইল‍্যান্ডের পাকচং স্হানের নাম অনুসারে এই নেপিয়ার পাকচং জাতের ঘাসের নাম করন করা হয়েছে।</p> <p>উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের দাবী, তাদের উৎপাদিত নেপিয়ার পাকচং ঘাস চাষ দেখে অনেক খামারি ও উন্নত জাতের গবাদি পশু পালনকারীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এই জাতের ঘাস চাষ করছেন এবং তাদের পশুর খাদ‍্যের চাহিদা মিটাচ্ছেন।</p> <p>গো-খাদ্যের সংকটের কারণেই বাড়ছে চাষ করা ঘাসের চাহিদা। বিভিন্ন জাতের ঘাস থাকলেও নেপিয়ার পাকচং ঘাস অন‍্য ঘাসের তুলনায় অনেক বেশি পূষ্টিগুন সম্পন্ন তাই খামারীদের নেপিয়ার ঘাসের চাষে আগ্রহ বেশি। এই ঘাসের সবচেয়ে বেশি চাহিদা সৌখিন গবাদি পশু পালনকারি ও খামার মালিকদের কাছে। বর্তমানে খৈল, ভুসি আর বিচালির দাম আকাশ ছোঁয়া। তাই সঙ্গত কারণে তাজা নেপিয়ার পাকচং ঘাস পশু পালনকারীদের কাছে বেশি পছন্দের। অন্যদিকে গাভী পালনকারীরা বেশি দুধ পাওয়ার আশায় এই জাতের সবুজ ঘাসকেই গোখাদ্য হিসাবে বেছে নিয়েছেন। তাই তারা উপজেলা প্রানী সম্প্দ বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে ঘাস চাস করছেন। এতে খামারিদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার শামীমা আক্তার ও উপসহকারী প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রফিকুল ইসলাম।</p> <p>খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে খামারীরা ঘাস চাষের জমিতে কেবল ঘাসই নয়, সাথী ফসল হিসাবে অন্য ফসলও ফলাচ্ছেন। ফলে এক জমি থেকে অন‍্য ফসল ফলিয়ে লাভ তুলে নিচ্ছেন।</p> <p>ভূরুঙ্গামারী হাটে ঘাস কিনতে আসা আশরাফুল আলম বলেন, নেপিয়ার পাকচং জাতের ঘাস খুব ভাল এবং সাশ্রয়ী। গবাদি পশুও খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাই ঘাস বিক্রির খবর পেয়ে ভূরুঙ্গামারী হাটে কিনতে এসেছি। তাছাড়া নতুন প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা এই অফিসে যোগদানের পর থেকেই আমাদেরকে পশু পালন ও এই জাতের ঘাস উৎপাদনের বিষয়ে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। এখন থেকে আমিও আমার জমিতে এই জাতের ঘাস চাষ শুরু করব বলে ভাবছি। যাতে আমাকে আর ঘাস কিনতে এই হাটে  আসতে না হয়।</p> <p>উপ সহকারী প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান স‍্যার যোগদানের পর থেকেই নেপিয়ার পাকচং জাতের ঘাস চাষের উদ‍্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষে ও বাজারজাত করনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। এতে উদ্যোক্তারাও ভালো সাড়া দিচ্ছেন।</p> <p>এ বিষয়ে উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার শামীমা আক্তার জানান, 'নেপিয়ার পাকচং ঘাস অন‍্যান‍্য জাতের ঘাসের চেয়ে অনেক পুষ্টিগুন সম্পন্ন। যা গবাদি পশু স্বাস্হ‍্যবান হওয়ার জন‍্য খুবই উপকারী। গবাদি পশু পালকারীরা এই জাতের ঘাস চাষ করতে চাইলে আমরা তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব ইনশাআল্লাহ।'</p>