বগুড়ার ধুনট উপজেলায় অপহরণের পর প্রায় দেড়মাস ধরে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর সাত সদস্যর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগে গ্রামের প্রধান মাতব্বর আবু সাঈদ শেখকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আবু সাঈদ উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের দেউড়িয়া গ্রামের ওসমান আলীর ছেলে। সোমবার বিকেলের দিকে ধুনট থানা থেকে আদালতের মাধ্যমে তাকে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রামের মাতব্বরদের সিন্ধান্তে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর পরিবারটি সমাজচ্যুত করার বিষয়ে রবিবার কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত সংবাদটি আমলে নিয়ে থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে রবিবার রাতে দেউড়িয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে আবু সাঈদ শেখকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রামের মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে প্রায় চার মাস ধরে স্কুলছাত্রীর পরিবারটি একঘরে হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দেউড়িয়া গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে গোপালনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ওই ছাত্রীকে একই গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে মাসুদ রানা গোপালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফজলুল হক বাবুর সহযোগীতায় ১৬ জুলাই গ্রামের রাস্তা থেকে অপহরণ করে। স্কুলছাত্রী ওই সময় বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী কুনকইনা গ্রামে নানার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়েছিল। এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে ১২ আগস্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মাসুদ রানা ও ফজলুল হকসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা এ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য মেয়ের পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেয়। কিন্ত এতে কাজ না হলে অভিযুক্তরা গ্রামের মাতব্বর পান্না সরকার, আবু সাইদ ও সোলায়মান আলীর যোগসাজসে ২৮ জুলাই স্কুলছাত্রীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করে। শুধু তাই নয়, মাতব্বররা ধর্ষণ মামলাটি আপস-মীমাংসার নামে বাদীর নিকট থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন।
এদিকে মামলার পর আসামিদের গ্রেপ্তার কিংবা মেয়েটিকে উদ্ধারে তার পরিবারকে কোনো সহযোগিতা করেনি থানা পুলিশ। এ অবস্থায় ২৫ সেপ্টেম্বর ওই স্কুলছাত্রীকে সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা। উদ্ধারের পর ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে।
ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণের ঘটনায় সহযোগিতা করা এবং স্কুলছাত্রীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ গ্রামের মাতব্বর আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত গ্রামের অন্যান্য মাতব্বরদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য