রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় এক কিশোরীকে গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় এক আসামির ছয় মাস ও তিন আসামির প্রত্যেককে এক মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশনে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার এ আদেশ দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মহিষাডাঙা গ্রামের লক্ষীকান্ত গাইনের স্ত্রী মমতা গাইন, ছেলে গৌতম গাইন, বিমল গাইনের স্ত্রী উর্মিলা গাইন ও টিকেন্দ্র মন্ডলের স্ত্রী লতিকা মণ্ডল।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার মহিষাডাঙা গ্রামের সন্দীপ মণ্ডলের মেয়ে বন্যা মণ্ডলকে বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণ করত একই গ্রামের উর্মিলা গাইন। ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনাকে ঘিরে প্রতিবাদ করায়, গৌতম গাইন, তার মা মমতা গাইন, উর্মিলা গাইন ও লতিকা মণ্ডল পরিকল্পিতভাপবে সন্দীপ মণ্ডলের মেয়ে বন্যা মণ্ডল ও স্ত্রী নমিতা মণ্ডলকে গালিগালাজ, অশালীন আচরণ ও মারপিট করে। এ ঘটনায় নমিতা মণ্ডল বাদী হয়ে ওই চারজনের নাম উল্লেখ করে ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা (সিআরপি-১২/১৬ আশাশুনি) দায়ের করেন।
বিচারক মো. আকরাম হোসেন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক রশিদুজ্জামান ওই বছরের ৮ এপ্রিল মামলায় বর্ণিত চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন (সিআর-৬৮/১৬ আশাশুনি)। ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল ওই চার আসামির বিরুদ্ধে ৩৪১, ৩২৩, ৩৫৪ ও ৫০৬ ধারায় আদালত অভিযোগ গঠন করা হয় (টিআর-৩১৯/১৬ আশা)।
পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার ৩২৩ ও ৩৫৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আসামি গৌতম গাইনকে পৃথক দুই ধারায় তিন মাস করে ছয় মাস কারাদণ্ড দেন। একইভাবে মমতা গাইন, উর্মিলা গাইন ও লতিকা মণ্ডলকে ৩২৩ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদণ্ড দেন।
তবে তাদেরকে জেলহাজতে না পাঠিয়ে (১) প্রবেশনকালীন কোনো আসামি কোনো প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা এই ধরনের অপরাধ করবেন না, (২) শান্তি বজায় রাখবেন, ভালো ব্যবহার করবেন (৩) কোর্ট এবং আইনপ্রযোগকারী সংস্থা আসামিদের যখন যেখানে ডাকবেন তখনই তারা উপস্থিত হবেন। (৪) কোনো প্রকার মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করা যাবে না। (৫) কোনো খারাপ সঙ্গে মেশা যাবে না। (৬) প্রবেশনকালীন আসামিরা অভিযোগকারী নমিতা মণ্ডলকে তিন মাস অন্তর ১০টি করে ২০টি ফলদ গাছ দেবেন। (৭) আসামি গৌতম গাইন সপ্তাহে একদিন করে নিজ এলাকায় মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাবেন। (৮) আসামি মমতা, উর্মিলা ও লতিকা ১৫ দিন পরপর একদিন নিজ এলাকায় বাড়ি বাড়ি যেয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রচার প্রচারণা চালাবেন।
বাদীপক্ষে পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শংকর কুমার মজুমদার। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ কে এম রেজোয়ান উদ দৌলা সবুজ। আদালতের এ আদেশ সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের পেশকার মো. বনি শাহাদাৎ।
মন্তব্য