<p>রাজশাহীর সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন হলেও প্রায় ১০ বছর ধরে সংযুক্তিতে চাকরি করছেন ঢাকায় স্বাস্থ্য বিভাগে। সরকারি চাকরি বিধিতে সংযুক্তিতে সর্বোচ্চ তিন বছর কাজ করার সুযোগ থাকলেও বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন আব্দুল্লাহ হেল কাফি। অন্যদিকে সিভিল সার্জন অফিসের পদটি না ছাড়ায় তাঁর স্থলে কেউ যোগও দিতে পারছেন না। কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ যে ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চিঠি পাঠিয়েছে, এর মধ্যে কাফিও রয়েছেন। দুদকের চিঠিতে তাঁকে রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কাগজে-কলমে তিনি এখনো রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য বিভাগে তিনি পরিচিত বিল্ডিং কাফি নামে।</p> <p>অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল্লাহ হেল কাফি চাকরির পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের ভবন নির্মাণের ঠিকাদারিকাজ নিয়ন্ত্রণ করেন। এ কারণে সবাই তাঁকে বিল্ডিং কাফি নামে চেনে।</p> <p>বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের পাঁচটি হাসপাতাল উন্নয়ন প্রকল্পের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্তিতে ঢাকায় রয়েছেন। জানা গেছে, যেখানেই হাসপাতালের নতুন নতুন ভবন বা নির্মাণকাজ হয়, সেখানেই সংযুক্তিতে কাফিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল উন্নয়নের সময় তাঁকে সেখানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে দুদকের নজরদারিতে আসেন তিনি।</p> <p>চলতি বছর জানুয়ারিতে দেশজুড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের যে ১৫০ জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম প্রকাশ করেছে দুদক তার মধ্যেও কাফি অন্যতম। তবে তিনি আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।</p> <p>আর দুদকের তালিকার ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যেও রয়েছে তাঁর নাম। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বাসিন্দা কাফির রয়েছে অঢেল সম্পদ।</p> <p>স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, রাজশাহী নগরীর উপশহর ২ নম্বর সেক্টরে রয়েছে তাঁর পাঁচ কাঠা জমি, যার আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা। সেখানে কায়সার মেমোরিয়ালের সামনে পাশাপাশি দুটি ১০ তলা ভবনের মাঝখানের এই জমি কয়েক বছর আগে ক্রয় করেন তিনি। জানা গেছে, এই জমিতেও ১০ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।</p> <p>রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই দপ্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন কাফি। কিন্তু গত প্রায় ১০ বছর তিনি সংযুক্তিতে ঢাকায় চাকরি</p> <p> করছেন। তাঁর প্রতাপে অন্য কাউকে এখানে নিয়োগও দেওয়া যাচ্ছে না। ঢাকায় বসেই তিনি এখনো রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের টেন্ডারসহ অন্যান্য কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করেন।’</p> <p>এসব অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ হেল কাফি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রেষণে ঢাকায় রয়েছি। আমি অন্যায় কিছু করিনি। রাজশাহীতে আমার পদে যারা যেতে চায়, তারা আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’</p> <p>রাজশাহীর সিভিল সার্জন এনামুল হক বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাই। পদটিতে থাকা ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় সংযুক্তিতে আছেন বলে শুনেছি। কিন্তু আমি এ ধরনের কোনো কর্মকর্তাকে আমার এখানে রাখতে চাই না। হয় আমার এখানে কাজ করতে হবে, না হলে একেবারে রিলিজ নিতে হবে। এ অবস্থায় পদটি হয় শূন্য, না হয় পূরণের জন্য আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি সম্প্রতি। এখনো কোনো উত্তর পাইনি।’</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদক রাজশাহীর একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। তাদের সম্পদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’</p>