<p>ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার নারী নরসুন্দর শেফালী রানী শীলকে জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী শেফালী রানী শীলের হাতে পাঁচ শতাংশ জমির দলিল তুলে দেন।</p> <p>এ সময় কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>নরসুন্দর শেফালী রানী শীলর জীবন সংগ্রাম নিয়ে কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ গত বছরের ২ জুলাই ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান কাঁঠালিয়া উপজেলার দোগনা বাজারে আসেন। তিনি সেফালী রানী শীলের দোকান ও তাঁর বাড়িতে যান। খুপড়ি ঘরে শেফালীর জীবনযুদ্ধ দেখে প্রতিমন্ত্রী তাকে একটি ঘর তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বলতলা মৌজার খাস খতিয়ান ১ এর ১৪৬৯ নম্বর দাগে পাঁচ শতাংশ জমিতে একটি চারকক্ষ বিশিষ্ট টিনসেড বিল্ডিং নির্মাণ করে দেওয়া হয়। ওই ঘরেই এখন বসবাস করছেন শেফালী রানী ও তাঁর সন্তানরা।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ডেকে নিয়ে কথা শোনেন। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন শেফালী। দুহাত তুলে দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জমির দলিল শেফালীর কাছে তুলে দেন।</p> <p>দলিল হাতে পেয়ে আনন্দিত শেফালী রানী শীল বলেন, আমার দুরবস্থা ও সংগ্রামের কথা পত্রিকা ও টিভিতে দেখে প্রধানমন্ত্রী ঘর তুলে দিয়েছেন। আমাকে ডেকে নিয়ে তিনি জড়িয়ে ধরে পরম মমতা দিয়েছেন। তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু যেমন একজন ভালো মানুষ ছিলেন, শেখ হাসিনাও তেমনি মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। আমাকে তিনি ঘর দিয়েছেন, জমি দিয়েছেন। এখন আবার জমির দলিল দিলেন। দোয়া করি তিনি যেন এভাবেই গরিব মানুষের সেবা করতে পারেন।</p> <p>জানা যায়, স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়েন শেফালী রানী শীল (৫০)। পাঁচ ছেলে মেয়ের লেখাপড়া ও সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে তাঁর। বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে যে টাকা পাওয়া যেতো, তা দিয়ে কোনো রকমের খাবার ঝুটতো। কখনো একবেলা খেয়ে পুরো দিন কাটতো ছয় সদস্যের এ পরিবারের। অন্যের বাড়িতে কাজের ফাঁকে স্থানীয় বাজারের দোকানে দোকানে পানি দিয়ে কিছু বাড়তি টাকা আয় করতেন তিনি। এতেও যখন সংসারের খরচের চাকা ঘুরছিল না, তখন স্বামী পেশাকে বেছে নিলেন তিনি। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে পুরুষের চুল দাড়ি কাটছেন ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার দোগনা গ্রামের শেফালী রানী। দোগনা বাজারে এক প্রবাসীর ঘরের বারান্দায় তিনি সেলুন দেন। এ কাজেই চলছে তাঁর ছয় সদস্যর সংসার। তিনি আধুনিক বিভিন্ন স্টাইলের চুলের কাট দিচ্ছেন তরুণ-যুবকদের। কম টাকায় চুল দাঁড়ি কাটিয়ে স্বস্তিও পাচ্ছেন স্থানীয়রা। সামান্য আয়ে অভাব অনটনের মধ্যে কেটে যাচ্ছে তাঁর দিন। </p>