সিরাজগঞ্জের তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত ড্রাইভার নিরব হোসেনের মা মরিয়ম বেগম (৬০) তাড়াশে ছেলের কাছে বেড়াতে এসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে তার অবস্থা আরো অবনতি হওয়ায় শুক্রবার তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়।
এ সময় ড্রাইভার নিরব হাসপাতালের অন্য অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার মো. মোমিনকে সাথে নিয়ে সকাল ১০ টায় বগুড়ার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু এটি ছিল তাদের সাজানো নাটক। তারা অ্যাম্বুলেন্সযোগে বগুড়ায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে না গিয়ে রংপুর সদরে নিরবের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। রংপুরে পৌঁছে মায়ের সাথে নিরব নেমে গেলে পুনরায় রংপুর থেকে ড্রাইভার অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে তাড়াশে ফেরার পথে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা সদরে আইল্যান্ডের সাথে দুর্ঘটনার শিকার হন।
এতে অ্যাম্বুলেন্সটির সামনের অংশ দুমরে-মুচরে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ ড্রাইভার মোমিনকে উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তিনি বুকে ও মাথায় গুরুতর আঘাত পান।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি তাদের হেফাজতে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে তাদের অনুকূলে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করেছে। আজ শনিবার তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জামাল মিয়ার নেতৃত্বে ওই তদন্ত কমিটি দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রওনা হয়েছেন।
তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য এই নতুন নয়। মাঝে মধ্যেই ড্রাইভাররা রোগী অন্য হাসপাতালে নেওয়ার নামে ভাড়া বাণিজ্য করে থাকে।
তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে নতুনটি এক বছর যাবত অচল। তারপরেও ড্রাইভার নিরব হোসেনকে আউট সোর্সিংয়ে নিয়মিত বেতন নিয়ে থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা বিল দেখানো হলেও প্রায় প্রায়ই অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হয়ে পড়ে থাকে।
তাড়াশ পৌর সদরের বাসিন্দা মো. লূৎফর রহমান অভিযোগ করে বলেন, তাড়াশ হাসপাতালের একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স কোনো মতে সচল থাকলেও ড্রাইভারদের খামখেয়ালিতে সেটিও এখন অচল হয়ে গেলো। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে অ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হওয়ায় তাড়াশ হাসপালে রোগী স্থানান্তরে আর কোনো গাড়ি অবশিষ্ট রইলো না।
ড্রাইভার মোমিন চিকিৎসারত অবস্থায় মুঠোফোনে বলেন, সহকর্মীর অনুরোধে তাকে রংপুরে নিয়ে গেলে এ দুর্ঘটনার শিকার হই। আমি ভুল করেছি, ক্ষমা চাই।
তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জামাল মিয়ার বলেন, অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যেই গোবিন্দগঞ্জের উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য