<p>বরগুনায় কর্মহীন অসহায় দরিদ্র পরিবারের পাশে নেই অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি। অন্যদিকে সামাজিক দূরত্ব মানছে না গ্রামের মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খেয়া চলাচল বন্ধের ঘোষণা থাকলেও তা মানছেন না খেয়াঘাটের ইজারাদাররা।</p> <p>বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলার দুজন সংসদ সদস্য, একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ২০ জন জেলা পরিষদ সদস্য, ছয়জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১২ জন ভাইস চেয়ারম্যান, চারজন পৌর মেয়র, ৪৮ জন কাউন্সিলর, ৪২ জন ইউপি চেয়ারম্যান এবং ৫৭৬ জন ইউপি সদস্য রয়েছেন। নির্বাচনের আগে জনগণের সেবা করার সুযোগ চেয়ে শত শত পোস্টার বিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন তাঁরা।</p> <p>অথচ হাতে গোনা মাত্র দুই-তিনজন জনপ্রতিনিধি ছাড়া প্রায় সব জনপ্রতিনিধিই দেশের এই দুঃসময়ে হাত গুটিয়ে বসে আছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।</p> <p>বরগুনার বুড়িরচর ইউনিয়নের একজন দরিদ্র এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,  নির্বাচনের আগে আগে সবাই পোস্টার, হ্যান্ডবিলে লিখেছিলেন, 'ভোট দিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন'। অথচ এখন কারো খবর নেই। পারলে সরকারি যেসব বরাদ্দ আসে সেখান থেকেও ভাগ বসাতে চান কোনো কোনো ইউপি সদস্য এমনকি চেয়ারম্যানও। </p> <p>জেলার সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য মিলিয়ে জেলায় সাত শতাধিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাঁদের মধ্যে বরগুনা পৌরসভার মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন (পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে), আমতলী পৌরসভার মেয়র মো.  মতিউর রহমান (এক হাজার পরিবারের মাঝে) এবং আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান (শতাধিক পরিবারের মাঝে) ছাড়া আর কেউই দরিদ্র পরিবারে ত্রাণ সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেননি। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও রাজধানী ঢাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম এম মশিউর রহমান সিহাব বরগুনায় সরাসরি উপস্থিত থেকে গত কয়েকদিনে প্রায় ছয় হাজার দরিদ্র পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, আলু ও সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন পণ্য বিতরণ করেন বলে জানা গেছে।</p> <p>এছাড়া জেলা অওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও সুনাম দেবনাথ ব্লাড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাড. সুনাম দেবনাথ এবং বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক এবং কোন্টাল ইয়োথ নেটওয়ার্ক নামের একটি সংগঠন দরিদ্র পরিবারের মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও খাদ্র সামগ্রী বিতরণ করে বলে জানা গেছে। </p> <p>এদিকে, জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ হাট-বাজারেই লোকে লোকারণ্য। স্বাভাবিক সময়ের মতোই তারা হাটবাজারে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। এমনকি তিনজন করে যাত্রী নিয়ে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলগুলো চলছে অহরহ। জেলার বেশ কয়েকটি রুটে জেলা প্রশসনের পক্ষ থেকে খেয়া চলাচল বন্ধ করা হলেও তা মানছেন না ইজারাদাররা। জেলার গোলবুনিয়া, চালতাতলী, নিশানবাড়িয়া, ফুলঝুড়ি খেয়াঘাটসহ বেশ অধিকাংশ খেয়াঘাটগুলোই সচল রয়েছে বলে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে।</p> <p>বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ পর্যন্ত ৬৫০০ পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, আলু, তেল  এবং সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। খেয়া চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, 'অফিসিয়ালি খেয়া চলাচল বন্ধ রয়েছে। তারপরও হয়তো দুই-একটি খেয়া জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করছে। তাছাড়া গ্রামপর্যায়ে জনসমাগম আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বলে আমরাও অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা নিয়ে শিগগির  পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি।</p>