<p>ইট, পাথর আর সুরকি দিয়ে গাঁথা ও এক সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি।  জমিদার বাড়িটি আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে রুপচন্দ্র রায়ের পুত্র জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের হাত ধরে ইট পাথর আর সূড়কি গাঁথুনিতে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। পুরোনো ভবনের চারিদিকে নানা শিল্পকর্ম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি মঠ, সুবিশাল দীঘি, মাঠ এবং কারুকার্যমন্ডিত জমিদার বাড়ি।</p> <p>বরিশালের ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়িটি অবহেলিত থাকলেও থেমে নেই পর্যটকদের ভিড়। অথচ সংস্কারের মাধ্যমে এ বাড়িটি হতে পারে বরিশালের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। শহর থেকে উত্তর দিকে বেশ খানিকটা দূরেই বাজার ছাড়িয়ে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির অবস্থান। প্রায় চার শ’ বছর পূর্বে রাজা রায়চন্দ্র রায় নির্মিত এ বাড়িটি বরিশাল বিভাগের মধ্যে অন্যতম পুরনো জমিদার বাড়ি। পুরনো হওয়ার কারণে বাড়ির চারদিকের দেয়ালগুলোর পলেস্তারা  খসে পড়তে শুরু করেছে। </p> <p>এ জমিদার বাড়িটি চার শ’ বছরের পুরনো হলেও দ্বিতীয় তলার অংশ এখনও অনেকটা নতুন মনে হয়। জমিদার বাড়ির বেশিরভাগ স্থাপনাই আটচালা দেউল রীতিতে তৈরি। বাড়ির সামনেই রয়েছে কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন মঠ। আদিপুরুষ রূপচন্দ্র রায়ের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পায় ওই জমিদার বংশ। পরবর্তীতে ১৭০০ সালের পর এখানে রূপচন্দ্রের পৌত্র রাজচন্দ্র রায়ের জমিদারি গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই বাড়িটি লাকুটিয়ার জমিদার বাড়ি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। জমিদার বাড়ির শেষ ধ্বংসাবশেষ ও স্মৃতিচিহ্ন দেখতে এখনও  মানুষ আসে এখানে।</p> <p>ঐতিহ্যের স্মারক এই জমিদার বাড়িটি অবহেলিত থাকলেও এখানে থেমে নেই কৌতুহলী পর্যকটদের আসা যাওয়া।  নানা বয়সের মানুষের আশাযাওয়া থাকে সবসময়। শীতকালে মানুষজন এখানে পিকনিক করতে আসে। এই এলাকার বাসিন্দা দুই ভাই ইমরান ও জুবায়ের বলেন, তারা অবসরে বেশীরভাগ সময় এখানেই বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। এখানে ঘুরতে আসা মানুষজন সম্পর্কে তারা বলেন প্রতিদিনই এখানে লোকজন আসে কেউ ঘুরে দেখতে আবার কেউ ছবি তুলতে, তেমনি একজন বিএম কলেজের শিক্ষার্থী মিঠুন বনিক এসেছেন ডিএসএলআর নিয়ে ছবি তোলার জন্য।</p> <p>রাজা রাজচন্দ্র রায়ের এ বাড়িটি উনিশ শতকেও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের পীঠস্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল। কালের গর্ভে আজ তা কেবল স্মৃতি বহন করে চলছে। জমিদার পরিবারের সদস্যদের খ্যাতি ছিল প্রজাকল্যাণ এবং বিবিধ জনহিতকর কার্যক্রম। বরিশাল শহর থেকে লাকুটিয়া হয়ে বাবুগঞ্জের সড়কটি নির্মাণ হয়েছিল লাকুটিয়ার জমিদারের সময়ে। লাকুটিয়ার জমিদার বাড়িতে আজ জমিদারি নেই, নেই জমিদারদের কোন ওউত্তরসূরিও। </p> <p>সূত্রমতে, রাজা রাজচন্দ্র রায়ের এ বাড়িটি উনিশ শতকেও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের পীঠস্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল। কালের গর্বে আজ তা কেবল স্মৃতি বহন করে চলছে। জমিদার পরিবারের সদস্যদের খ্যাতি ছিল প্রজাকল্যাণ এবং বিবিধ জনহিতকর কার্যক্রমে। তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন বরিশাল শহরে নির্মিত হয়েছিল ‘রাজচন্দ্র কলেজ।'  শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক ওই কলেজ থেকেই তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। বরিশাল শহর থেকে লাকুটিয়া হয়ে বাবুগঞ্জের সড়কটি নির্মাণ হয়েছিল লাকুটিয়ার জমিদারের সময়ে। পাকিস্তান আমলে ওই এলাকায় ‘পুষ্পরানী বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদাররা। </p> <p>ওই বংশের শেষ উত্তরাধিকারী দেবেন রায় চৌধুরী বহুকাল পূর্বেই সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দেবেন রায় চৌধুরীর কন্যা মন্দিরা রায় চৌধুরীর বিয়ে হয় বরিশালের কাশিপুরের মুখার্জী বাড়িতে। সেখানেই তিনি  এখনও বসবাস করছেন। ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্য ইতিহাস সংগৃহীত হয়ে আছে বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে। কালের স্রোতে আজ সেই ঐতিহ্য বিলীনের পথে।</p>