<p>কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম ও লুটপাটের কথা উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক বরাবর আলাদা ২টি অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. খোরশেদ আলম বাবুল ও নুরে আলম। ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দুটি দায়ের করেন এ দুই আওয়ামী লীগ নেতা। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সর্দার।</p> <p>অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৪০ দিনের কর্মসূচির প্রতি প্রকল্পে প্রায় ৪ লাখ টাকার মধ্যে মেম্বারদেরকে ১ লাখ টাকার মাটির কাজের টার্গেট দিয়ে গত ৩ বছরে ৩০টি প্রকল্পের ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন চেয়ারম্যান কামাল হোসেন। চেয়ারম্যান কামাল ৪০ দিনের কর্মসূচির ননওয়েজ খাতের ৫% প্যালাওয়াল নামে মাত্র প্রকল্প দিয়ে স্থানীয় মানরা পাকা রাস্তা থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা, নেয়ামতপুর পাটারী বাড়ি থেকে মসজিদ পর্যন্ত ৯৪ হাজার টাকা, বাদুয়াড়া গজারিয়া পুকুরের পশ্চিম পাড়ে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, বাদুয়াড়া মধ্য পাড়া প্যালাসাইটিং ৭৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। বাস্তবে এই প্রকল্পগুলোর কোনো অস্তিত্ব নাই। আলীনকিপুর স্কুল থেকে চৌধুরী বাড়ি রাস্তায় ৩ বছরে ৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। যার মধ্যে ১% এডিবি এলজিএসপি জেলা পরিষদ বরাদ্দ রয়েছে।</p> <p>প্রতি ওয়ার্ডে পানি নিষ্কাশনের জন্য আরসিসি পাইপ ক্রয় বাবদ উপজেলা এডিবির ৩ বছরে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। টি আর, কাবিখা, কাবিটা ৩ বছরে ১ টাকারও মাটির কাজ না করিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন। তাছাড়া সোলার ও আর্সেনিক মূক্ত নলকূপ, বিভিন্ন ভাতার কার্ড চেয়ারম্যানের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিতরণ করার অভিযোগ করা হয়।</p> <p>অভিযোগে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, একই স্থানে প্রতিবছর সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার দাপট স্বেচ্ছাচারিতা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীদেরকে হয়রানীসহ বিভিন্ন দুর্নীতি আমলে নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে মার্ক করে দেয়। যার স্মারক নং ৪২৯৪০ (তারিখ ৩১/১২/২০১৮ইং)। তারপর জেলা প্রশাসক সরেজমিনে তা তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য মনোহরগঞ্জের প্রাক্তণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম বানুকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।  কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার গড়িমসি করে অযথা সময়ক্ষেপণ করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সর্দারকে তদন্তভার দেয়া হয়।</p> <p>অভিযোগকারী সূত্রে জানা যায়, যে দপ্তরের অধীনে দুর্নীতি, সেই দপ্তরেরই অফিসার দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সর্দার তাদেরকে না ডেকে চেয়ারম্যানের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিটিং করে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেছেন। দীর্ঘ সময় তদন্ত কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় অভিযোগকারীগণ হতাশা প্রকাশ করেন। </p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অতি দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের সই (স্বাক্ষর) চেয়ারম্যান কামাল তার অনুগত সাইফুল মেম্বারের মাধ্যমে নকল করে কৃষি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। তার আধিপত্যের কাছে জিম্মি থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের অন্যান্য মেম্বাররা তার স্বেচ্ছাচারিতা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না। একই ইউপির তালতলা নুরানী মাদ্রাসার মাঠ ভরাট ৪০ দিনের কর্মসূচি দিয়ে ৩৫ ট্রাক্টর মাটি ফেলে ৩ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। এভাবে অনেক অভিযোগ স্থানীয়দের কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে হুমকি-ধামকি এবং মামলা-হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকেন।</p> <p>এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সর্দারের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। </p> <p>অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। </p> <p>অভিযোগকারী দুই আওয়ামী লীগ নেতা জানান, সঠিক তদন্ত হলে চেয়ারম্যানের সকল দুর্নীতির চিত্র বের হয়ে আসবে।</p>