<p>নাটোরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে সোমবার কয়েকটি স্থান থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক নিজে উপস্থিত থেকে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান কিনবেন বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। মূলত খাদ্য গুদামে প্রভাবশালী চক্রের পাশ কাটিয়ে সরাসরি যাতে কৃষক ধান বিক্রি করতে পারেন সে কারণেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দাবি জেলা প্রশাসনের। </p> <p>তবে নাটোরের মতো খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলার জন্য মাত্র ২০১৫ মে. টন ধান এবং ১৪ হাজার ৬৮৬ মে. টন চাল দামের ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছেন স্থানীয় কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। </p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় খাদ্য গোডাউনগুলো বরাবরই প্রভাবশালীদের দখলে থাকে। সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্যশস্য ক্রয় করার জন্য ঘোষণা দিলেও রাজনৈতিক নেতাদের চাপে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে সরকারি উদ্দেশ্য  বাস্তবায়ন হয় না, শস্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত থাকে সাধারণ কৃষকরা। তবে এবার সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছেন জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। তারই অংশ হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আকতার বানু, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করলেন। এ সময় সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম প্রকৃত কৃষক কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করে দেন এবং ভারপ্রাপ্ত গোডাউন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ খাদ্য কর্মকর্তা ধান সংগ্রহ করেন।<br />  <br /> সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারা নাটোর সদর উপজেলার বুড়িবটতলা এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, চার বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ৭৫ মণ। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে দাম পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ। এতে অনেক টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ইউএনও স্যারের মাধ্যমে এক টন ধান গোডাউনে দিতে পেরেছি। এতে আমি মণপ্রতি ৪০০ টাকারও বেশি দাম পেয়েছি। আমার কিছুটা হলেও লাভ আসবে। তিনি বলেন, এইভাবে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হলে দাম এমনিতে বেড়ে যাবে। </p> <p>কৃষি বিভাগ জানায়, এই বছর নাটোর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। যা থেকে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে এত পরিমাণে ধান উৎপাদন হলেও নাটোরের সাতটি উপজেলায় এবার মাত্র ২ হাজার ১১৫ মেট্রিক টন সংগ্রহ করবে খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে নাটোর সদরে মাত্র ৯৪ মেট্রিক টন। কৃষকরা জানান, এত বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত ধানের জেলায় এত অল্প পরিমাণ ধান ও চাল ক্রয় তেমন দামের ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কৃষক নেতা রামপুরের রফিকুল ইসলাম বলেন, নাটোর জেলাতেই হাজার হাজার মে. টন ধন উৎপাদন হচ্ছে। সেখানে সরকারিভাবে কেনা হচ্ছে মাত্র ৯৪ মে. টন ধান। এটা কৃষকদের সঙ্গে সরকারের এক ধরনের তামাশা। তিনি বলেন, মৌসুম সময়ে বিদেশ থেকে চাল আমদানি মোটেও কাম্য নয়। সরকারকে কৃষক বাঁচাও নীতি গ্রহণ করতে হবে।</p> <p>সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মেহেদুল ইসলাম বলেন, কৃষি কার্ডের মাধ্যমে আমরা প্রকৃত কৃষক নির্বাচন করবো। এক্ষেত্রে আমার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতে পারি। তারা প্রকৃত কৃষকদের নির্বাচন করে দিলে তার কাছ থেকেই ধান ক্রয় করা হবে। কোনো কৃষকের যদি ধানে আদ্রতা বেশি থাকে, সে পরে ধান শুকিয়ে সঠিক আদ্রতায় দিতে পারবে। প্রতিদিন একটি ইউনিয়ন করে আমরা ধান ক্রয় করব। এতে করে কৃষক লাভবান হবে।</p> <p>শস্য সংগ্রহ জেলা কমিটির সভাপতি ও নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শাহ রিয়াজ বলেন, সারা দেশে ধানের দাম কমের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ কারণে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমার প্রত্যেকটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে তদারকির মাধ্যমে ধান ক্রয় করবে। আমি মঙ্গলবার নিজেও ধান ক্রয়ের সময় উপস্থিত থাকব। একজন কৃষক এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় টন ধান দিতে পারবেন। এতে করে কৃষকরা লাভবান হবে এবং বাজারে ধান সংগ্রহের প্রভাব পড়লে অন্য কৃষকরাও ন্যায্য মূল্য পাবেন। </p> <p>জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে আগে ধান ক্রয় করতে হবে। সে জন্যই আজ থেকে আমরা ধান ক্রয় অভিযান শুরু করেছি। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে যাতে ধান ক্রয় করতে পারি সেজন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আশা করছি ধান ক্রয় অভিযানের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।</p>